সৈয়দপুরে পৌর ও উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতির হাতাহাতি
শাহজাহান আলী মনন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি:
নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে ড্রেন নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করায় পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সহযোগী নেতাদের উপর চড়াও হয়েছিল উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতিসহ তার বাবা ও ভাই। এসময় ঘটনা ভিডিও করায় একজন সাংবাদিকের মোবাইল কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করে এবং কাঠ নিয়ে মারতে উদ্ধত হয় হামলাকারীরা।
সোমবার (১৫ মে) বেলা ৪ টায় নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের উপজেলা সাব রেজিষ্টার অফিসের পিছনে এই ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দেখা দেয় এবং এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। মূহূর্তেই এই খবর ছড়িয়ে পড়ায় শহরজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে এবং সমালোচনার ঝড় বইছে।
সৈয়দপুর পৌর ছাত্রলীগ সভাপতি সিফাত সরকার জানান, প্রায় ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে উপজেলা পরিষদ ভবনের পিছনের পুকুর ঘেষে একটি ড্রেন নির্মান করছে পৌরসভা। কাজ শুরুর পর থেকেই এলাকাবাসী বিভিন্ন ভাবে অভিযোগ করছেন যে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করা হচ্ছে।
এর প্রেক্ষিতে ঘটনাটা জানতে প্রথমে পৌর সচিবের সাথে দেখা করি। কিন্তু তিনি কাজের টেন্ডার ও শিডিউল বিষয়ে কোন তথ্য দিতে পারেননি। পরে ঘটনাস্থলে গেলে দেখা যায় একেবারে নাম্বার ছাড়া নিম্নমানের ইটের খোয়া দিয়ে লোকাল বালু ও তৃতীয় শ্রেণীর সিমেন্ট মিশিয়ে ঢালাই করা হচ্ছে। অথচ সাইড ইঞ্জিনিয়ার ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কেউ উপস্থিত নাই।
এমতাবস্থায় সাব কন্ট্রাক্টর ও মিস্ত্রি মুক্তার হোসেন বলেন, ঠিকাদার যেভাবে কাজ করতে বলেছে সেভাবে করা হচ্ছে। তাই বিষয়টা তাৎক্ষণিক উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা প্রকৌশলী ও কাজ তদারককারী পৌর সাব ইঞ্জিনিয়ারকে জানাই। সাব ইঞ্জিনিয়ার আসছেন বলে কথা দেয়ায় তার অপেক্ষা করছিলাম।
এমন সময় উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি টুটুল মোবাইল করে বলে, তুমি ওখানে কেন? কাজটা আমার ভাই টগর করছে। ভালোমন্দ তোমার দেখতে হবেনা। তুমি চলে যাও নয়তো খারাপ হবে। এই কথা বলাকালেই বেশ কয়েকজন সংবাদকর্মী উপস্থিত হন। তাদের সাথে বলার মধ্যেই ছুটে আসেন টুটুল ও টগরের বাবা নীলফামারী জেলা কার মাইক্রো ও পিকআপ মালিক সমিতির সভাপতি মোনায়েম হোসেন। তিনি এসেই অকথ্য গালাগাল ও হম্বিতম্বি শুরু করেন।
আমার সাথে থাকা পৌর ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক সহ অন্য ছাত্র নেতারা তাঁর এমন উদ্ধত আচরণের প্রতিবাদ করলে তিনি তাদের উপরেও চড়াও হন এবং চিৎকার করে বলতে থাকেন আমাদের ক্ষমতা আছে তাই পৌরসভার সব কাজ নিয়ে ইচ্ছেমত করবো। তাতে কার কি? মান ঠিক আছে কিনা তা ইঞ্জিনিয়ার আর কর্তৃপক্ষ দেখবে। অন্যকারো এখানে কি?
পৌর ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক শুভ বলেন, কথা কাটাকটির মাঝেই টুটুল ও টগর এসে অতর্কিত হামলা করে আমাদের কে ধাক্কা ধাক্কি ও কিল ঘুসি মারা শুরু করে। এক পর্যায়ে একজনকে চর মারেন মোনায়েম। এতে উত্তেজনা দেখা দিলে সাংবাদিকরা ভিডিও ধারণ করতে গেলে টগর সাংবাদিক জাকিরের মোবাইল কেড়ে নিতে টানা হেচড়া করে। আর মোনায়েম কাঠ নিয়ে মারার জন্য তেড়ে আসে। উপস্থিত লোকজন তাদের প্রতিহত করে।
ঘটনার সময় উপস্থিত বাবু চৌধুরী বলেন, মোনায়েম গংরা আজ অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটিয়েছে। বাক বিতণ্ডা থেকে হাতাহাতি এবং মারধর করেছে। এমনকি সাংবাদিককের মোবাইল ছিনতাই ও মারার চেষ্টা করে। আমি নিম্নমানের খোয়া দেখিয়ে দেয়ায় তারা বাবা ছেলে আমার সাথেও অশোভন আচরণ করে। যা বরদাস্ত করার মত নয়। আসলে তারা লুটেপুটে খেতে খেতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তাই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডেও লিপ্ত হচ্ছে।
তারা তিনজন বলেন, আমরা মূলতঃ বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা নিরলস পরিশ্রমে দেশকে উন্নয়নের শিখরে পৌঁছাতে সচেষ্ট। তাই তাঁর উন্নয়ন কাজে কোনরকম দুইনম্বরী হচ্ছে কিনা তা দেখা দায়িত্ব মনে করেই এলাকাবাসীর অভিযোগ যাচাই করতে ওই কাজের স্থানে যাই। কিন্তু টুটুলরা সম্পূর্ণ অন্যায় আচরণ করে। যা সাংবাদিকরা দেখেছে। তাদের ভিডিও ফুটেজ দেখলেই সত্যতার প্রমান পাবেন।
জানা যায় রিয়া ট্রেডার্স নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ড্রেনটি নির্মাণের কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ কে তা কেউ জানেনা। এমনকি পৌর কর্তৃপক্ষও কোন তথ্য দিতে গড়িমসি করছে। তবে একটি সূত্র মতে, পৌর মেয়র রাফিকা আকতার জাহানের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে পৌরসভার অনিয়মিত কর্মচারী ও উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি টুটুলের ছোট ভাই টগর। অথচ নিয়মানুযায়ী পৌরসভায় কর্মরত কেউ বা তাদের পোষ্যরা অর্থনৈতিক কোন কাজে সম্পৃক্ত হতে পারবেনা।
অভিযোগ আছে তারা পারিবারিক বলয়ে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে পৌরসভার বিভিন্ন কাজ বাগিয়ে নিয়ে নিম্নমানের উপকরণে নামকাওয়াস্তা কাজ করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। ইতোপূর্বে শহরের শেরে বাংলা সড়কের অর্ধেকাংশ সংষ্কারের নামে থুকপালিশ মার্কা কাজ করেছে। যেকারণে মাত্র ১৫-২০ দিনের মধ্যেই ভাঙ্গা স্থানগুলোর পাথর ও পিচ উঠে গিয়ে আগের চেয়েও বড় বড় গর্ত হয়ে খানাখন্দময় সড়কে পরিণত হয়েছে। যা সৈয়দপুরের টক অফ দা টাউন হিসেবে সর্বস্তরের মানুষের মুখে মুখে সবসময়ই আলোচিত হচ্ছে।
সূত্রটির অভিযোগ দলীয় পরিচয়ে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা হস্তগত করে সেগুলোর অর্থ লোপাটসহ বিভিন্ন কাজের কমিশন বাণিজ্য সুচারু করতে মোনায়েম গংয়ের একটি সিন্ডিকেট আছে। যার মাধ্যমে বহুমুখী অনিয়ম ও দূর্নীতি চলছে দেদারছে। এমনকি খোদ পৌর মেয়র তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। যে কারণে পৌরসভার উল্লেখযোগ্য কোন উন্নয়ন হয়নি গত তিন বছরে।
এব্যাপারে টগরের সাথে কথা বললে সে জানায়, টেন্ডার বা কাজের সাথে আমার কোন সম্পৃক্ততা নাই। আমি পৌর কর্মচারী হিসেবে সেখানে গেছি। কে কাজ করছে, কেমন কাজ হচ্ছে এব্যাপারে আমি কিছুই জানিনা। আর টুটুল বলেন, পৌর ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক চাঁদাদাবী করে সরকারি কাজ বন্ধ করে দিয়েছে বলে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই।
কিন্তু তারা আমাকেসহ আমার বাবা ও ভাইয়ের সাথে অপ্রীতিকর আচরণ করে। ফলে বাক-বিতন্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে থানায় খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। বিষয়টি আমরা দেখছি। এনিয়ে সংবাদ করার কিছুই নাই। আমরা সবাই আপন। আওয়ামী পরিবার। জাস্ট ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। সব ঠিক হয়ে যাবে।