কাপাসিয়া (গাজীপুর) প্রতিনিধি:
গাজীপুরের কাপাসিয়ায় তালাকের তথ্য গোপন করে সাবেক স্ত্রীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করে প্রতারণা ও বিশ্বাস ভঙ্গের অভিযোগে সাবেক স্বামী স্কুল শিক্ষিক জাহাঙ্গীর আলমের (৪৫) বিরুদ্ধে গাজীপুরের বিজ্ঞ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভুক্তভোগীর মামলার আইনজীবি জাকারিয়া জাহিদ।
অভিযুক্ত স্বামী জাহাঙ্গীর আলম (৪৫) গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার সোনারুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এবং একই উপজেলার উত্তর খামের গ্রামের মেজবাহ উদ্দিনের ছেলে ।
মামলার সূত্রে জানা যায়, মামলার বাদীর বাড়ি একই উপজেলার দিগধা (ভূলেশ্বর) গামে। ২০০০ সালে অক্টোবরে আসামির সঙ্গে বাদীর বিয়ে হয়। বিয়ের পর বাদী তার বাড়ীতে দাম্পত্য জীবন শুরু করেন। তাদের ঘরে ১৩ থেকে ১৮ বছরের তিনজন ছেলে সন্তানও রয়েছে। অভিযুক্ত পরকিয়ায় আসক্ত হয়ে প্রায়ই বাদীর বাবার বাড়ী থেকে যৌতুকের টাকা এনে দেয়ার জন্য মাধর করতো। বাদীর কাছে যৌতুক দাবি করে অহেতুক সংসারে বিশৃঙ্খলা লাগিয়ে রাখত। তার এসব কর্মকান্ডে বাদী বাধ্য হয়ে স্বামীর বিরুদ্ধে ২০২২ সালের জুলাই মাসে গাজীপুরের বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে যৌতুক নিরোধ আইনে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় বিজ্ঞ আদালতের বিচারক রিফাত আরা সুলতানা অভিযুক্তের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা ইস্যু করলে তিনি উচ্চ আদালত থেকে তিনি জামিন নেন। পরে তিনি বাদীকে ২০২২ সালের মার্চ মাসে তালাক প্রদান করে তা গোপন রাখে। আপোষ-মিমাংসার কথা বলে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য প্রতারণার করে এবং ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত অভিযুক্তের বাড়ীতে বাদীকে রেখে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস করতে থাকে। তিনি বাদীর সাথে দাম্পত্য জীবন কাটানোর সময় একই বছরের এপ্রিল মাসে স্থানীয় গাক এনজিও থেকে লোন উঠায়। ওই লোন উঠানোর সময় অভিযুক্ত বাদীর স্বামীর পরিচয়ে গাক এনজিও কর্তৃপক্ষের লোনের কাগজপত্রে গ্রেন্টার হিসেবে স্বাক্ষর করেন। পরবর্তীতে তিনি বাদীর দায়ের করা মামলায় ওই বছরের সেপ্টেম্বরে বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিনের আবেদন করে এবং তার স্ত্রী (বাদীকে) তালাক দিয়েছে বলে আদালতে প্রমাণ পত্র দাখিল করেন। যা, বাদী কখনো বুঝতে পারে নাই তিনি বাদীকে তালাক দিয়েছেন। ওই আবেদনে তিনি (অভিযুক্ত) আদালতকে জানান ২০২২ সালের মার্চ মাসে বাদীকে সে তালাক দিয়েছে। তালাকের কোনো নোটিশ না দিয়ে তার বাড়ীতেই বাদীকে রেখে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে প্রতারণা বসবাস করে ওই বছরের জুন মাস পর্যন্ত দাম্পত্য জীবন যাপন করে। এই সময়ের মধ্যে তিনি প্রতারণা করে আরো ৫টি বিয়ে করেন। বাদী বলেন, জাহাঙ্গীর আলম (সাবেক স্বামী) জামিনের আবেদন করলে ওই আবেদনের সাথে আমাকে তালাক দিয়েছে বলে আদালতে কাগজপত্র জমা দিলে জনাতে পারি সে আমাকে তালাক দিয়েছে। তালাকের বিষয়টি গোপন রেখে ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত তার বাড়ীতে আমাকে রেখে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে শারীরিকভাবে মেলামেশা করে বসবাস করতে থাকে। আমি স্বামীকে বিশ্বাস করতাম। মনে করেছি, পরকীয়া প্রেম থেকে তিনি ফিরে এসেছেন। তিনি জেনেশুনে এবং বুঝে আমাকে তালাক দিয়ে তালাকের তথ্য গোপন রেখে আমাকে ধর্ষণ করেছেন। আমার বিশ্বাসের অমর্যাদা করেছেন।এসব ঘটনায় আসামীর কর্মস্থল সোনারুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানতে পেরে স্কুলের প্রধান শিক্ষক চলতি বছরের ২৪ মে কাপাসিয়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ বহাল এবং বিভাগীয় মামলা করার জন্য লিখিত আবেদন করেন। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে কাপাসিয়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে সুপারিশ করে ২৫ মে অফিসিয়ালী চিঠি প্রেরণ করেন। ওই চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন সহকারী শিক্ষক মো: জাহাঙ্গীর আলমের অনৈতিক কর্মকান্ড ও সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর বিধি ৩ (খ) পরিপন্থি। তার প্রথম স্ত্রীর (সাবেক) করা দুইটি ফৌজদারী মামলা আদালতে চলমান রয়েছে। অভিযুক্ত শিক্ষক বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থাকার প্রমাণ রয়েছে। শিক্ষকের কাছে বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা নিরাপদ নয়। যেকোন সময় আরও বড় ধরনের অঘটন ঘটতে পারে। নৈতিক স্খলনের ঘটনায় শিক্ষকের কাছে শিক্ষার্থী অনিরাপদ থাকার প্রতিবেদনেও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়নি কর্তৃপক্ষ। এদিকে, কাপাসিয়া উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ওই আদেনে নোট দেন অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে কয়েকটি নারী নির্যাতন মামলা চলমান রয়েছে। বারবার গ্রেফতার হওয়ায় প্রাথমিক শিক্ষার ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে এবং শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। তার ঔদ্ধাত্যপূর্ণ আচরণ শৃঙ্খলা ও আপিলবিধি পরিপন্থি হওয়ায় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করার সুপারিশ করেন। অভিযুক্ত সোনারুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো: জাহাঙ্গীর আলমের বলেন এগুলো আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। আওয়ামীলীগ এবং স্বৈরাচারের দোসর আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ দিয়ে আমাকে হয়রানি করছে। এসব বিষয়ে সহাকারী শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বাীকার করে গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুদ ভূঁইয়া বলেন, বিষয়টি ইতোমধ্যে প্রসেসিংয়ে আছে। আইন অনুযায়ী অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।