মনির হোসেন, বেনাপোল প্রতিনিধি:
লাভজনক হওয়া সত্ত্বেও বেনাপোল-খুলনা-মোংলা ভায়া যশোর রুটে চলাচলকারী সরকারি ব্যবস্থাপনার কমিউটার (বেতনা) ট্রেনটি বেসরকারি খাতে লিজ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে সংশ্লিষ্ট মহলে উদ্বেগ ও প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
রেল সূত্রে জানা যায়, বেনাপোল-খুলনা-মোংলা রুটটি বর্তমানে প্রতি মাসে গড়ে ৩৫ লাখ টাকার রাজস্ব আয়ে সক্ষম। স্বল্প ভাড়া, কম সময় এবং আন্তর্জাতিক চেকপোস্টে যাত্রীদের ব্যাপক চাহিদার কারণে এই রুটটি অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
গোপনে দরপত্র ও লিজ কার্যক্রম
সূত্র মতে, গত ২২ এপ্রিল রেলওয়ে দরপত্র আহ্বান করে এবং ১৯ মে তা খোলা হয়। পরবর্তীতে জুন মাসে যাচাই-বাছাই শেষে একটি বিশেষ মূল্যায়ন কমিটিতে পাঠানো হয়। যদিও এখনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না এলেও ‘এইচ অ্যান্ড এম কোং’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যেই কার্যাদেশ পেয়েছে বলে গুঞ্জন উঠেছে।
এইচ অ্যান্ড এম কোম্পানির মালিক হুমায়ুন আহমেদ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “আমরা কাজ পেয়েছি। জুলাইয়ের প্রথমার্ধে ট্রেনটি আমাদের পরিচালনায় আসার কথা থাকলেও বাজেট ও প্রশাসনিক কিছু জটিলতায় তা সম্ভব হয়নি। আগস্ট মাসের শুরুতে হয়তো কার্যক্রম শুরু হবে।”
ট্রেনটির অতীত ও বর্তমান অবস্থান
১৯৯৯ সালের ২৩ নভেম্বর সরকারিভাবে যাত্রী চলাচলের জন্য ট্রেনটি চালু হয়। ২০১০ সাল পর্যন্ত সরকারি তত্ত্বাবধানে চলার পর এটি বেসরকারি খাতে লিজ দেওয়া হয়। কিন্তু বেসরকারি ব্যবস্থায় যাত্রীসেবার মান অবনতির পাশাপাশি চোরাকারবারীদের আধিপত্য বেড়ে যাওয়ায় ২০১৩ সালে আবার এটি সরকারি ব্যবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়।
বর্তমানে প্রতিদিন ট্রেনটি খুলনা থেকে বেনাপোল এবং মোংলা পর্যন্ত দুই দফায় চলাচল করে। যাত্রীরা স্বল্প ভাড়ায় নিরাপদ ও সাশ্রয়ী ভ্রমণের জন্য ট্রেনটিকে বেছে নেন।
চোরাচালান ও টিকিট দুর্নীতি
স্থানীয়দের অভিযোগ, ট্রেনে নারী চোরাকারবারীদের প্রভাব রয়েছে। অনেকেই টিকিট না কেটে দলবদ্ধভাবে ট্রেনে ওঠেন এবং যাত্রীদের সিট দখল করে রাখেন। ফলে টিকিটধারীরা হয়রানির শিকার হন। টিটি, জিআরপি ও আরএনবি সদস্যরা এসব চোরাচালানকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয় না বলেও অভিযোগ রয়েছে।
রেলের ব্যাখ্যা
রেলের চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার মিহির কুমার গুহ জানান, “নীতিমালার আলোকে যদি কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বিগত ছয় মাসের গড় আয় থেকে বেশি দর দেয়, তাহলে ট্রেনটি লিজ দেওয়া যেতে পারে।”
তবে রেল মাস্টার সাইদুজ্জামান জানিয়েছেন, এখনও তিনি কোনো আনুষ্ঠানিক কাগজ হাতে পাননি।
রাজশাহী রেল ভবনের চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার সুজিত কুমার বিশ্বাস বলেন, “প্রক্রিয়াধীন দরপত্র যাচাই শেষে ঢাকা অফিসে পাঠানো হবে। সর্বোচ্চ দরদাতাকে কাজ দেওয়া হবে।”
জনগণের আশঙ্কা ও দাবি
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাধারণ মানুষের দাবি, যাত্রীসেবার মান বজায় রাখতে এবং চোরাচালান প্রতিরোধে ‘বেতনা’ ট্রেনটি সরকারি ব্যবস্থাপনাতেই চালু রাখা হোক। বেসরকারিকরণ হলে পূর্ব অভিজ্ঞতা অনুযায়ী যাত্রীদের ভোগান্তি ও অনিয়ম আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা করছেন তারা।