ডেস্ক রিপোর্ট:
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিতীয় দফার শুল্ক আলোচনার প্রথম দিন শেষ হয়েছে। আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বেশিরভাগ ইস্যুতে উভয় পক্ষ একমত হয়েছে বলেও জানিয়েছেন বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার গোলাম মোর্তোজা।
বাংলাদেশ সময় রাত ৩টায় এক ফেসবুক পোস্টে তিনি জানান, “যুক্তি-তর্কে অধিকাংশ বিষয়ে দুইপক্ষ একমত হয়েছে। তবে এখনই শুল্ক ইস্যু নিয়ে মন্তব্য করা যাবে না।”
আলোচনার পরিধি ও নেতৃত্ব
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্য সম্পর্কের প্রায় সবকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আলোচনায় নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ঢাকাস্থ জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খালিলুর রহমান ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, যাঁরা ভার্চুয়ালি বৈঠকে অংশ নেন।
ঢাকা থেকে সরাসরি ওয়াশিংটনে পৌঁছে বৈঠকে যোগ দেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান এবং অতিরিক্ত সচিব ড. নাজনীন কাওসার চৌধুরী।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে কৃষি, জ্বালানি, বাণিজ্য ও কপিরাইট বিষয়ক সংস্থাগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভস (USTR)-এর প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
আলোচনার লক্ষ্য ও প্রস্তাবিত সুবিধা
দ্বিতীয় দফা এই আলোচনার মূল উদ্দেশ্য হলো একটি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত করা, যা বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত ৩৫ শতাংশ শুল্ক থেকে আংশিক বা পূর্ণ অব্যাহতি দিতে পারে।
বাংলাদেশের বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান জানান, “যুক্তরাষ্ট্র থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিপত্র পাঠানো হয়েছে, যা ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হতে পারে।” এই চুক্তিতে সামরিক সরঞ্জাম, এলএনজি, গম, তুলা, উড়োজাহাজসহ বিভিন্ন পণ্যের আমদানি সহজীকরণের প্রস্তাব রয়েছে।
সম্ভাব্য প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন জানান, “শুধু শুল্ক নয়, সামগ্রিক দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ইস্যুতে আলোচনা হচ্ছে। দেশের স্বার্থ সুরক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।”
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশা অনুযায়ী কিছু পণ্যে শুল্ক ছাড় দেওয়ার বিষয়ে সরকার নমনীয়। তবে এতে দেশের বেসরকারি খাতের ক্ষতির আশঙ্কা নেই।
সরকার ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বোয়িং উড়োজাহাজ কেনার উদ্যোগ নিয়েছে এবং এলএনজি, গম, তুলা আমদানি বাড়ানোর পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানান তিনি।
তৈরি পোশাক রপ্তানি নিয়ে উদ্বেগ
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক থাকায় রপ্তানি কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতোমধ্যে ভিয়েতনামের ওপর শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশ করেছেন। ভারতের মতো অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের তুলনায় শুল্কহার কম।
এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাকের বাজারে টিকে থাকতে শুল্ক ছাড় জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সামনের পদক্ষেপ
বৃহস্পতিবার (বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায়) দ্বিতীয় দিনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। শুক্রবারও আলোচনার তৃতীয় দিন অনুষ্ঠিত হবে।