শহীদুজ্জামান শিমুল, সাতক্ষীরা :
টানা বর্ষণ ও অপরিকল্পিত খাল-নদী খননের কারণে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে সাতক্ষীরা পৌর এলাকা ও আশপাশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। শহরের অধিকাংশ ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, টয়লেট এবং খাওয়ার পানির উৎস টিউবওয়েল পানিতে নিমজ্জিত। ভেঙে পড়েছে ড্রেনেজ ব্যবস্থা। ছড়িয়ে পড়েছে পানিবাহিত রোগ।
অনেক পরিবার ইতোমধ্যে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পানিতে তলিয়ে গেছে আমন ধানের বীজতলা ও কৃষিজমি। সৃষ্ট হয়েছে খাদ্য, স্বাস্থ্য ও চলাচলসংকট।
যেসব এলাকাগুলো ডুবে আছে
টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে সাতক্ষীরা শহরের রসুলপুর, মেহেদীবাগ, মধু মল্লারডাঙ্গী, পলাশপোল, পুলিশ লাইন, কামালনগর, ইটাগাছা, রাজারবাগান, মাছখোলা, পুরাতন সাতক্ষীরা, বদ্দীপুর কলোনি, আলিয়া মাদ্রাসা, রথখোলা বিল, কুখরালী, গড়েরকান্ডা, বাঁকাল, রইচপুর, মধ্য কাটিয়া, বারুইপাড়া সহ অসংখ্য এলাকা পানিতে তলিয়ে আছে।
সেখানে রাস্তাঘাটে হাঁটু কিংবা কোমর সমান পানি জমে থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। খাওয়ার পানি, রান্না, গোসল এমনকি পায়খানাও ব্যাহত হচ্ছে পানির কারণে।
অভিযোগ: সমন্বয়হীনতা, দখল ও দুর্নীতি
স্থানীয়রা বলছেন, বছরের ৪–৬ মাস এভাবেই জলাবদ্ধতায় কাটাতে হয় তাদের। তারা অভিযোগ করেছেন, নদী-খাল খননে অনিয়ম, খালের মুখ বন্ধ করে প্রভাবশালীদের মাছ চাষ, এবং এলোমেলো ড্রেন নির্মাণই এই দুর্ভোগের মূল কারণ।
বারুইপাড়া এলাকার দীনু রঞ্জন বলেন, “আমাদের কুখরালী উত্তরপাড়ার রাস্তা গত এক মাস পানির নিচে। পাঁচ শতাধিক মানুষ পানিবন্দি। বিলের পানি বের হবার মুখ বন্ধ করে রেখেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা।”
বদ্দীপুর কলোনির বাসিন্দা আলমগীর কবির বলেন, “চার–পাঁচ মাস হাঁটু পানি জমে থাকে। রাস্তা নষ্ট হয়ে গেছে, বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারে না, পঁচা পানির কারণে চর্মরোগ হচ্ছে।”
পুরাতন সাতক্ষীরা এলাকার সাইফুল ইসলাম জানান, “সাতক্ষীরা-আশাশুনি সড়কের পাশের রামচন্দ্রপুর বিলের পানি উঠেছে উঠানে। অর্ধশতাধিক বাড়ি-ঘর প্লাবিত।”
সরকারি ব্যর্থতা ও সমন্বয়ের অভাব
নাগরিকরা জানান, কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে খনন করা নদী ও খালগুলোতে প্রকল্পের নামে হয়েছে অনিয়ম। খালের তলদেশ না কেটে শুধু পাড় উঁচু করে কৃত্রিম গভীরতা দেখানো হয়েছে, যার ফলে পানির নিষ্কাশন ব্যাহত হচ্ছে।
কামালনগরের জহুরুল ইসলাম বলেন, “সরকার বদল হয়, কিন্তু আমাদের দুর্ভোগ কাটে না। ড্রেন ঠিক থাকলে এই ভোগান্তি পোহাতে হতো না। কাগজে প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও বাস্তবে নাগরিক সেবা তলানিতে।”
প্রশাসনের বক্তব্য
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শোয়াইব আহমাদ জলাবদ্ধতা কবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন শেষে জানান, “ড্রেন ও খালের মুখ বন্ধ করে মাছ চাষের বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বারবার কথা বলেছি। তারা দ্রুত ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছে। দীর্ঘমেয়াদে জলাবদ্ধতা নিরসনে পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।”