ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে সাম্প্রতিক সংঘাতের সময় ভূপাতিত হওয়া রাফাল যুদ্ধবিমান নিয়ে চাঞ্চল্যকর মন্তব্য করেছে এর নির্মাতা ফরাসি প্রতিষ্ঠান ড্যাসল্ট অ্যাভিয়েশন। তারা দাবি করেছে, যুদ্ধবিমানটি কোনো শত্রু পক্ষের হামলায় নয়, বরং প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে বিধ্বস্ত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী এরিক ত্রাপিয়ের বলেন, ১২ হাজার মিটার উচ্চতায় একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ মিশনের সময় দুর্ঘটনাটি ঘটে। তার ভাষ্য অনুযায়ী, ঘটনাস্থলে কোনো ধরনের রাডার সিগনাল শনাক্ত হয়নি এবং কোনো প্রতিপক্ষের হস্তক্ষেপের প্রমাণও পাওয়া যায়নি।
এ বক্তব্য প্রকাশ করে ফরাসি ওয়েবসাইট Avions de Chasse। ভারতের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ‘দ্য প্রিন্ট’ এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেছে, ড্যাসল্ট অ্যাভিয়েশনের পক্ষ থেকে এটাই ছিল প্রথম আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া।
তবে ভিন্ন দাবি করে আসছে পাকিস্তান। তাদের ভাষ্য, সীমান্ত সংঘর্ষের সময় তারা অন্তত একটি রাফাল ভূপাতিত করেছে, কেউ কেউ দাবি করছে সংখ্যাটা তিনটি পর্যন্ত। যদিও ভারতের পক্ষ থেকে এই দাবি বারবার প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। এখনো পর্যন্ত রাফাল হারানোর বিষয়টি নিয়ে ভারত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো স্বীকারোক্তি দেয়নি।
তবে গত মাসে সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত ‘শাংগ্রি-লা ডায়ালগ’-এ ভারতের চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ (সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহান বলেন, ‘অপারেশন সিন্দুর’-এ ভারত কিছু ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, তবে পাকিস্তানের দাবি—রাফালসহ ছয়টি বিমান হারানোর—তাকে তিনি “সম্পূর্ণ মিথ্যা” বলে উড়িয়ে দেন।
একই দিন রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, ৭, ৮ ও ১০ মে ভারত পাকিস্তানের অভ্যন্তরে একাধিক বিমানঘাঁটিতে সফল হামলা চালিয়েছে। আরেকটি ভিন্ন সূত্রে, ইন্দোনেশিয়ায় নিযুক্ত ভারতের প্রতিরক্ষা অ্যাটাশে ক্যাপ্টেন শিব কুমারও ‘অপারেশন সিন্দুর’-এ কিছু ক্ষয়ক্ষতির কথা স্বীকার করেন। তার মতে, এসব ক্ষয়ক্ষতির পেছনে দায়ী ছিল রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের দুর্বলতা।
ড্যাসল্ট অ্যাভিয়েশনের পক্ষ থেকে প্রযুক্তিগত ত্রুটির দায় স্বীকার করার মাধ্যমে এই বিতর্কে এক নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। কারণ এতে ভারত ও পাকিস্তানের অবস্থানের বাইরে গিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে যুদ্ধবিমান নির্মাতার বিশ্বাসযোগ্যতা ও পারফরম্যান্সও প্রশ্নের মুখে পড়েছে। বিষয়টি এখন কেবল কূটনৈতিক বিতর্ক নয়, বরং প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি জগতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।