মো: গোলাম কিবরিয়া, রাজশাহী প্রতিনিধি
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চলের বৈধ বালুমহলে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। রোববার (৬ জুলাই) গভীর রাতে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা গুলি ছুড়ে দুইটি স্পিডবোট ভাঙচুর এবং একটি স্পিডবোটের ইঞ্জিন খুলে নিয়ে যায়। ঘটনাটি ঘটেছে চকরাজাপুর ইউনিয়নের লক্ষীনগর মৌজার খেয়া ঘাট এলাকায়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্র জানায়, রাত আনুমানিক সাড়ে ৩টার দিকে তিনটি নৌকায় করে প্রায় ৩৫-৪০ জন মুখোশধারী সন্ত্রাসী এসে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। খেয়া ঘাটে থাকা স্পিডবোটগুলোর একটি নদীর মাঝে নিয়ে গিয়ে ভাঙচুর করে এবং একটি বোটের ইঞ্জিন খুলে নেয়।
ঘটনার সময় ড্রেজার মেশিনে কাজ করা চালকরা আতঙ্কে নদীর পাড় ছেড়ে আশপাশের বাড়িতে আশ্রয় নেন। ঘটনাস্থলে পড়ে থাকা গুলির খোসা দেখে স্থানীয়রা নিশ্চিত হন, সেখানে সরাসরি গুলি ছোড়া হয়েছিল।
বালুমহল ইজারা ও চাঁদাবাজির অভিযোগ
রাজশাহী জেলা প্রশাসনের আওতায় থাকা ২৪ একর আয়তনের বালুমহলটি বাংলা ১৪৩২ সনের জন্য ইজারা নিয়েছে মেসার্স সরকার ট্রেডার্স। ইজারাদার এসএম এখলাসের ব্যবস্থাপক বেলাল হোসেন জানান, নদীপথে বালু বহনের সময় বিভিন্ন এলাকায় চাঁদা দিতে হয়। সম্প্রতি চাঁদা না দেওয়ার কারণে এই হামলা হতে পারে।
রাজশাহী জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক শামীম সরকার জানান, “কিছুদিন আগে লালপুরের ‘কাকন বাহিনীর’ লোকজন খাল এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে খাজনা আদায় শুরু করে, যার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তারা আমাদের ট্রলার থেকে চাঁদা চায়। রাজি না হওয়ায় এ ধরনের সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটিয়েছে বলে ধারণা করছি।”
সালিশে নয়, গুলি-আতঙ্কে রাত
গ্রাম পুলিশের একজন সদস্য জানান, “রাত সাড়ে তিনটার দিকে গুলির শব্দ শুনে ঘরের ফাঁক দিয়ে দেখি, তিনটি নৌকায় প্রায় ৪০ জন লোক নেমে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ছে। ড্রেজার চালকরা আমার বাড়িতে এসে আশ্রয় নেয়।”
নজরদারিতে পুলিশ ও তদন্ত
ঘটনার পর নৌ পুলিশ ও বাঘা থানা যৌথভাবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। নৌ পুলিশের চারঘাট ফাঁড়ির ইনচার্জ হুমায়ূন রশীদ জানান, “ঘটনার মূল কারণ পূর্বের দ্বন্দ্ব। কুষ্টিয়ার দৌলতপুর এলাকার কিছু লোক ঈশ্বরদী এলাকায় বালু বিক্রি বন্ধ করতে চায়, তাই হয়তো আতঙ্ক ছড়াতে গুলি ছুড়েছে।”
বাঘা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এএফএম আছাদুজ্জামান বলেন, “ঘটনার তদন্ত চলছে। নৌপুলিশ ও থানা পুলিশের পক্ষ থেকে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।”