নাজমুল হোসেন, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি:
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার একটি পরিত্যক্ত কারাগার পরিণত হয়েছে মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীদের নিরাপদ আস্তানায়। দিনের যেকোনো সময় সেখানে নির্বিঘ্নে চলে মাদকের আড্ডা, বেচাকেনা ও সেবন। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, পরিত্যক্ত কারাগারের ভেতরে কয়েকজন যুবক প্রকাশ্যে মাদক সেবন করছে।
এর আগে একই স্থানে ইমরান নামের এক যুবককে অপহরণ ও মারধরের অভিযোগে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, যার একটি ভিডিও ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। এসব ঘটনার কারণে পুরো উপজেলায় বিষয়টি নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।
সোমবার (৭ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কারাগারের দরজা-জানালা, লোহার রড, এমনকি দেয়ালের ইট পর্যন্ত খুলে নেওয়া হয়েছে। চারপাশে প্রাচীর থাকায় বাইরের দিক থেকে ভিতরের কোনো দৃশ্য দেখা যায় না। ফলে মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীদের আড্ডা নির্বিঘ্নে চলতে থাকে দিনের পর দিন।
স্থানীয়রা জানান, এই পুরনো জেলখানা রাণীশংকৈল পৌর শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সন্ধ্যারই এলাকায় অবস্থিত। প্রায় ২ একর জায়গাজুড়ে নির্মিত এই কারাগারটি তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সময় স্থাপন করা হয়। একসময় যেখানে ২০০ জন কয়েদির থাকার ব্যবস্থা ছিল, এখন তা মাদকের নিরাপদ গোপন ঘাঁটি।
স্থানীয় পিয়ারুল ইসলাম ও মাসুদ রানা বলেন, “সরকার যদি এটি রক্ষণাবেক্ষণ করত, তাহলে আজ মাদকের এমন ভয়াবহ চিত্র দেখতাম না। এটি সংস্কার করে অফিস বা আবাসনের ব্যবস্থাও করা সম্ভব।” তারা আরও জানান, এলাকার যুবক থেকে শুরু করে অল্পবয়সীরাও এই স্থানে এসে মাদক সেবন করছে, যা শিশুদের জন্যও একটি বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মো. আবু বেল্লাল সিদ্দিক বলেন, “স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তা চেয়েছি। কিছু লোক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে, তাই এখনো সংস্কার সম্ভব হয়নি। তবে সহযোগিতা পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
রাণীশংকৈল থানার ওসি মুহা. আরশেদুল হক বলেন, “মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের নিয়মিত টহল রয়েছে।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাফিউল মাজলুবিন রহমান জানান, “পুরাতন কারাগারটি অনেক আগেই মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তাই এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের এখন আর কিছু করার নেই।”
স্থানীয়দের অভিযোগ, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে এই এলাকা পুরোপুরি মাদকের অভয়ারণ্যে পরিণত হবে। তারা অবিলম্বে ভবনটি সংস্কার ও নিয়মিত নজরদারির দাবি জানিয়েছেন।