কাপাসিয়া (গাজীপুর) প্রতিনিধি:
গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলায় একের পর এক হত্যা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, গত ১১ মাসে এখানে অন্তত ১০টি হত্যাকাণ্ড ঘটলেও অধিকাংশ ঘটনার বিচার হয়নি। শুধু গত ১০ দিনের মধ্যেই তিনটি ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড কাপাসিয়াবাসীর শান্তি ও নিরাপত্তাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে।
সর্বশেষ, গত ৪ জুলাই রাত সাড়ে ৯টার দিকে সনমানিয়া ইউনিয়নের আড়াল হানির দোকান এলাকায় ২৬ বছর বয়সী যুবক জাহিদুল ইসলামকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে দুর্বৃত্তরা। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এর আগে ১ জুলাই, মনোহরদী থেকে তুলে এনে সনমানিয়া ইউনিয়নের নাঈম (২৪) নামের আরেক যুবককে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ২৫ জুন চাঁদপুর ইউনিয়নের ধরপাড়া গ্রামে পারিবারিক কলহের জেরে নিহত হন গৃহবধূ নারগিস আক্তার (৪৫)।
‘রিয়াজ বাহিনী’ আতঙ্কের নাম
স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, এসব হত্যাকাণ্ড কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বরং একটি সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী চক্রের—যা ‘রিয়াজ বাহিনী’ নামে পরিচিত। এই চক্রের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, ভূমি দখল, ও হত্যাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে।
প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে এই বাহিনী দাপটের সঙ্গে অপকর্ম চালালেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বিচারহীনতার সুযোগ নিয়েই তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
এই প্রেক্ষাপটে ৪ জুলাই কাপাসিয়ায় যান জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর কেন্দ্রীয় নেতারা। নিহত নাঈমের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে সমবেদনা জানান তারা এবং প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার কঠোর সমালোচনা করেন। নেতারা অভিযোগ করেন, নাঈমের বাড়িতে সন্ত্রাসীরা আগুন লাগিয়ে দেয়। আতঙ্কে পরিবারের পুরুষ সদস্যরা আত্মগোপনে আছেন।
আন্দোলনের হুঁশিয়ারি
সফর শেষে এনসিপি নেতারা কাপাসিয়া থানার ওসির সঙ্গে দেখা করে দ্রুত বিচার ও অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সংগঠক আলী নাসের খান বলেন,
“কাপাসিয়ায় এক মনস্টার গজিয়েছে, যাকে ঘিরে অপরাধের সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছে। প্রশাসন ব্যবস্থা না নিলে সর্বদলীয় প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।”
কেন্দ্রীয় সংগঠক আবদুল্লাহ আল মুহিম বলেন,
“কাপাসিয়া শান্তিপ্রিয় জনপদ। এখানে সন্ত্রাসবাদের ঠাঁই নেই। প্রয়োজনে মাটি কামড়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে, ইনশাআল্লাহ।”
তারা সতর্ক করে বলেন, “প্রশাসন এখনই যদি পদক্ষেপ না নেয়, তবে কাপাসিয়ায় আরেকটি ‘জুলাই ট্র্যাজেডি’ ঘটতে পারে।”