অন্তর্বর্তী সরকার টেলিযোগাযোগ খাতে নেটওয়ার্ক ও লাইসেন্সিং ব্যবস্থার সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। গত এপ্রিল মাসে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি খসড়া নীতিমালা প্রকাশ করেছে, যেখানে বিদেশি বিনিয়োগ উন্মুক্ত করার পাশাপাশি বিদ্যমান বহুস্তর লাইসেন্স কাঠামো পরিবর্তন করে তিন স্তরের লাইসেন্স কাঠামো প্রস্তাব করা হয়েছে।
নতুন নীতিমালায় মোবাইল ও ফিক্সড ফোন অপারেটরদের জন্য ‘অ্যাকসেস নেটওয়ার্ক সার্ভিস প্রোভাইডার (এনএনএসপি)’, নেটওয়ার্ক অবকাঠামোর জন্য ‘ন্যাশনাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যান্ড কানেকটিভিটি সার্ভিস প্রোভাইডার (এনআইসিএসপি)’ এবং আন্তর্জাতিক যোগাযোগের জন্য ‘ইন্টারন্যাশনাল কানেকটিভিটি সার্ভিস প্রোভাইডার (আইসিএসপি)’ নামে তিনটি লাইসেন্স ক্যাটাগরি থাকবে। এর ফলে বিদ্যমান চার অপারেটরের লাইসেন্স বাতিল হবে এবং ২০২৭ সালের মধ্যে নতুন কাঠামোয় স্থানান্তর করতে হবে।
তবে খসড়া নীতিমালাকে ঘিরে উদ্যোক্তা, রাজনীতিবিদ ও প্রযুক্তি বিশ্লেষক থেকে নানা সমালোচনা ও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। দেশের স্থানীয় ছোট ও মাঝারি আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। আইজিডাব্লিউ অপারেটরস ফোরামের সভাপতি আসিফ সিরাজ রব্বানী বলেন, খসড়া বাস্তবায়িত হলে হাজার হাজার প্রকৌশলী ও কর্মী বেকার হবেন এবং সরকারের রাজস্ব আয় ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নতুন নীতিমালা জাতীয় নির্বাচনের প্রেক্ষিতে একতরফাভাবে প্রণয়ন অনুচিত এবং এতে বিদেশি কোম্পানির আধিপত্য বেড়ে যাবে।
অপর দিকে মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটব জানায়, নতুন কাঠামোর কারণে গুণগত সেবা উন্নয়ন সহজ হবে এবং বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়বে।
সরকারি পক্ষ থেকে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপদেষ্টা বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানান, পুরনো বহুস্তর লাইসেন্স কাঠামো টেলিযোগাযোগ খাতের উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। নতুন নীতিমালা কার্যকর হলে সেবার দাম কমবে, গুণগত মান বাড়বে এবং বিদেশি বিনিয়োগ উৎসাহিত হবে। সব পক্ষের মতামত নিয়ে দেশীয় স্বার্থ রক্ষা করে নীতিমালা চূড়ান্ত করা হবে বলেও জানান তিনি।
বাজার ও প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের মতে, সময়োপযোগী ও স্বচ্ছ নীতিমালা হলে দেশের ডিজিটাল খাতের উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে, অন্যথায় দীর্ঘমেয়াদে খাতের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে।