২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভে রাখা ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার চুরির ঘটনায় মূল মাস্টারমাইন্ড হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন ভারতীয় নাগরিক নীলা ভান্নান ও রাকেশ আস্তানা। এই দু’জনকে বাংলাদেশ ব্যাংকে নিয়োগ দিয়েছিলেন তৎকালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমান, যিনি এই সাইবার জালিয়াতির পুরো পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের পেছনে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করেছিলেন। রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ, ভারত, ফিলিপাইনসহ ছয়টি দেশের অপরাধীচক্রের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে প্রশাসন।
সূত্রানুযায়ী, চুরির ঘটনার অন্যতম সন্দেহভাজন হিসেবে উঠে এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমানের নাম, যিনি বর্তমানে কানাডায় অবস্থান করছেন। অভিযোগ রয়েছে, তার ঘনিষ্ঠতার ভিত্তিতে ভারতীয় নাগরিক নীলা ভান্নান ও রাকেশ আস্তানাকে নিয়োগ দিয়ে সুইফট সিস্টেমের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল করার সুযোগ করে দেওয়া হয়।
নীলা ভান্নান রিজার্ভ চুরির আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের সুইফট নেটওয়ার্কে প্রবেশ করে নিরাপত্তা ভেঙে দেন এবং রাকেশ আস্তানা চুরির পর সিস্টেম থেকে গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট ও তথ্য মুছে ফেলেন বলে দাবি করা হয়েছে।
চিহ্নিত সন্দেহভাজনদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের পদচ্যুত ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান, রাজশাহী অফিসের নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক, তৎকালীন মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা, আইটি বিভাগের বর্তমান নির্বাহী পরিচালক দেব দুলাল রায় এবং বিএফআইইউ-এর সাবেক উপদেষ্টা দেব প্রসাদ দেবনাথ। এ ছাড়া সন্দেহভাজন হিসেবে উঠে এসেছে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের সাবেক এমডি আনিস এ খান এবং বিএফআইইউ-এর সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাসের নাম, যিনি বর্তমানে কারাবন্দী।
তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই অর্থচুরির ঘটনার সময় সুইফট বার্তার মাধ্যমে ৩৫টি ভুয়া পেমেন্ট ইনস্ট্রাকশন পাঠানো হয়, যার মধ্যে পাঁচটি কার্যকর হয়ে যায়। এর মধ্যে ৮১ মিলিয়ন ডলার ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংকের মাধ্যমে ক্যাসিনোতে চলে যায় এবং ২০ মিলিয়ন ডলার শ্রীলঙ্কার এক ভুয়া এনজিওর অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়, যা পরে উদ্ধার করা সম্ভব হয়। মোট চুরি হওয়া ১০১ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৩৪.৬ মিলিয়ন ডলার উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
চুরির ঘটনা ২৯ দিন গোপন রাখা হয়। পরে গণমাধ্যমে বিষয়টি ফাঁস হলে ব্যাপক আলোড়নের সৃষ্টি হয়। গভর্নর ড. আতিউর রহমান ও দুই ডেপুটি গভর্নর পদত্যাগ করেন।
বর্তমানে, এই ঘটনায় সিআইডি তদন্ত করছে এবং আগামীকাল (বুধবার) আদালতে তাদের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে ৮৫ বার সময় চাওয়া হয়েছে এই প্রতিবেদন দাখিলে।
সরকার সম্প্রতি আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরও রয়েছেন।
রিজার্ভ চুরির ঘটনায় আন্তর্জাতিক মামলা চলছে নিউইয়র্কের আদালতেও। যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই এবং ক্যালিফোর্নিয়ার একটি আদালত ইতোমধ্যে পৃথকভাবে এ বিষয়ে তদন্ত করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, “তদন্তে যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।”