জুলাই মাসের নির্মমতা আজ বাংলাদেশের ইতিহাসে এক রক্তাক্ত অধ্যায়। জনমানুষের হৃদয়ে যে ঘৃণা, যে তীব্র ক্ষোভ জন্ম নিয়েছে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের বিরুদ্ধে, তা উপলব্ধি করতে হলে দেখতে হবে এবি পার্টি আয়োজিত “জুলাই গণঅভ্যুত্থান” উপলক্ষে আয়োজিত ৩৬ দিনের চিত্র প্রদর্শনীর প্রতিটি ছবি। মঙ্গলবার রাজধানীর বিজয় নগরে এবি পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ ড. দিলারা চৌধুরী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, এই গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা এখনো গান, সিনেমা, নাটকের মাধ্যমে শহীদদের গল্পকে তুলে ধরতে পারিনি। হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে প্রাপ্ত স্বাধীনতা ও অধিকার রক্ষায় সংস্কার না এলে ভবিষ্যতে এ জাতি আরও গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু এবং সঞ্চালনা করেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসাইন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাহেদ উর রহমান, শহীদ জিসানের মা জেসমিন আক্তার, শহীদ নুরু ব্যাপারীর স্ত্রী রোমানা বেগমসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। মঞ্জু বলেন, শেখ হাসিনা যখন ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে কোটা আন্দোলনের মতো একটি গণদাবির সঙ্গে উপহাস করলেন, তখনই তার পতনের সূচনা হয়। পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড, গুম, কারফিউ, হেলিকপ্টার গুলি—সব কিছু দিয়েও গণতন্ত্রকামী জনগণের কণ্ঠরোধ করা যায়নি। তিনি বলেন, পৃথিবীর কোনো শাসকের ইতিহাস শেখ হাসিনার মতো নিষ্ঠুর নারী ঘাতকের নির্মমতার সঙ্গে তুলনীয় নয়।
ডা. জাহেদ উর রহমান বলেন, শেখ হাসিনা এখনো ভারতে বসে আন্দোলনকারীদের হুমকি দিচ্ছেন। ক্ষমা চাইলে তিনি ক্ষমা করবেন—এটা এক চরম আস্ফালন। এই খুনীদের বিচার না হলে ইতিহাস একদিন চরমভাবে প্রতিশোধ নেবে। শহীদ জিসানের মা বলেন, তার ছেলে শহীদ হওয়ার পর শোকে তার পুত্রবধূ আত্মহত্যা করেন—একসঙ্গে দুটি সন্তান হারিয়েছেন তিনি। তিনি শেখ হাসিনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন। শহীদ নুরু ব্যাপারীর স্ত্রী জানান, পরিস্থিতির ভয়াবহতায় স্বামীর লাশও তিনি তখন গ্রহণ করতে পারেননি।
প্রদর্শনীতে আরও উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) দিদারুল আলম ও হেলাল উদ্দিন, ব্যারিস্টার যোবায়ের আহমেদ ভূঁইয়া, আনোয়ার সাদাত টুটুল, এবিএম খালিদ হাসান, আব্দুল হালিম খোকন, সেলিম খানসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর পর্যায়ের নেতারা। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রদর্শনী চলবে এবং তা উন্মুক্ত থাকবে ১৩ জুলাই পর্যন্ত। এটি শুধু একটি প্রদর্শনী নয়, বরং ইতিহাসের রক্তাক্ত অধ্যায়ের এক জীবন্ত দলিল।