বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের জনক আজম খান ১৯৭২ সালে গড়ে তুলেছিলেন ব্যান্ড ‘উচ্চারণ’। তার প্রয়াণে থেমে গিয়েছিল এই ঐতিহাসিক ব্যান্ডটির পথচলা। কিন্তু ১৪ বছর পর নতুন করে প্রাণ ফিরে পাচ্ছে ‘উচ্চারণ’।
ব্যান্ডটির পুনর্জাগরণের ঘোষণা দিয়েছেন আজম খানের কনিষ্ঠ কন্যা অরণী খান। সম্প্রতি গণমাধ্যমে তিনি জানান, “আমরা এ বছরই নতুন করে উদ্যোগ নিচ্ছি উচ্চারণ ব্যান্ডের কার্যক্রম শুরু করার। পরিবারের সদস্যদের সবসময় চাওয়া ছিল, আব্বুর গানগুলো সবার মাঝে বেঁচে থাকুক। সবকিছু আগের মতোই থাকবে, শুধু মানুষগুলো বদলাবে।”
নতুন প্রজন্মের কাছে আজম খানের গান পৌঁছে দিতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান অরণী। তিনি বলেন, “শিগগির সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ব্যান্ডের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানানো হবে।”
বর্তমান লাইনআপে আছেন পিয়ারু খান, দুলাল, কোসেক, শিপার ও তুহিন। তারা মূলত আজম খানের গানগুলোকেই কেন্দ্র করে পারফর্ম করবেন, ঠিক সেই ঢংয়েই যেমনটি তিনি নিজে গাইতেন।
এক জেদের নাম ‘উচ্চারণ’
স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে ব্যান্ড সংগীতকে অনেকেই ‘অপসংস্কৃতি’ বলে তিরস্কার করতেন। সেই সময়ে আজম খান শুধুমাত্র জেদের বশে বন্ধুবান্ধব নিয়ে বাঁশের মঞ্চ বানিয়ে গান গাইতেন।
১৯৭২ সালে বন্ধু নীলু, মনসুর ও সাদেককে নিয়ে তৈরি করেন ‘উচ্চারণ’। প্রথম মঞ্চে উঠেছিলেন মাত্র চারটি গান নিয়ে। বছর শেষের দিকেই তারা বের করেন প্রথম রেকর্ড— ‘সালেকা মালেকা’ ও ‘হাইকোর্টের মাজারে’।
আজম খানের গান মানেই জাগরণ
আজিমপুরে ১৯৫০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি জন্ম নেওয়া আজম খানের কণ্ঠে জনপ্রিয় হয়েছিল একের পর এক কালজয়ী গান—
‘আলাল দুলাল, ‘যে মেয়ে চোখে দেখে না, ‘আমার বন্ধুয়া কী গাইতে জানে গান,’ ‘চার কলেমা সাক্ষী দেবে,’‘আসি আসি বলে তুমি আর এলে না’ ‘জ্বালা জ্বালা’, ‘অভিমানী’, ‘অনামিকা’, ‘পাপড়ি’, ‘ও চাঁদ সুন্দর’ ইত্যাদি।
২০১১ সালের ৫ জুন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন আজম খান। তবে তার সৃষ্টি আজও তরুণদের অনুপ্রেরণা হয়ে বেঁচে আছে। আর তার সেই সৃষ্টিকে নতুন করে প্রাণ দিতে এবার এগিয়ে এসেছেন তার পরিবার ও নতুন প্রজন্মের সংগীতশিল্পীরা।