পিরামিড—পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন এবং বিস্ময়কর স্থাপত্যকর্ম। এটি এক ধরনের জ্যামিতিক আকৃতি, যার প্রতিটি পার্শ্বতল ত্রিভুজাকার এবং সবগুলো শীর্ষে গিয়ে একটি বিন্দুতে মিলিত হয়। ভূমিসহ প্রতিটি পিরামিডে অন্তত চারটি তল থাকে। প্রাচীন মিসরের রাজারা, যাদের বলা হতো ফারাও, তারা মৃত্যুর পর পিরামিডের ভেতরেই সমাহিত হতেন। এসব পিরামিড তাদের কবরস্থল হিসেবেই নির্মিত হতো।
মিসরে বর্তমানে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৭৫টি পিরামিড রয়েছে। এর মধ্যে গিজার পিরামিড সবচেয়ে বিখ্যাত ও বিশাল। এটিকে খুফুর পিরামিডও বলা হয়, কারণ এটি তৈরি হয়েছিল ফারাও খুফুর জন্য। গিজার এই পিরামিড খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় ২৫০০ সালের দিকে নির্মাণ করা হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। প্রায় ৪ হাজার ৪০০ বছর ধরে এটি ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু স্থাপনা। ১৮৮৯ সালে ফ্রান্সে আইফেল টাওয়ার নির্মিত হওয়ার আগ পর্যন্ত এই গৌরবের স্থানটি খুফুর পিরামিডই ধরে রেখেছিল।
এই বিশাল পিরামিডের উচ্চতা প্রায় ৪৮১ ফুট এবং এটি নির্মিত হয়েছে ৭৫৫ বর্গফুট আয়তনের জমির ওপর। পিরামিডটি গড়ে তুলতে সময় লেগেছিল প্রায় ২০ বছর এবং এতে প্রায় এক লাখ শ্রমিক কাজ করেছিলেন। ধারণা করা হয়, পুরো পিরামিডটি তৈরি হয়েছে প্রায় ২ দশমিক ৩ মিলিয়ন পাথরের ব্লক দিয়ে, যার প্রতিটির গড় ওজন ছিল প্রায় ২ দশমিক ৫ টন। এই পাথরগুলো দূরবর্তী পাহাড় থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল এবং এমন নিখুঁতভাবে জোড়া লাগানো হয়েছিল যে, একেকটি পাথরের মাঝে একচুল ফাঁকও রাখা হয়নি।
পিরামিডটির আনুমানিক মোট ওজন প্রায় ৫৭ লাখ ৫০ হাজার টন। নির্মাণকাজে ব্যবহৃত পাথরের আকার ছিল বিশাল—অনেকগুলোর ওজন ৬০ টন পর্যন্ত এবং দৈর্ঘ্য ৩০ থেকে ৪০ ফুট পর্যন্ত। এত বিশাল আকার ও নিখুঁত নির্মাণশৈলীর কারণে পিরামিড আজও বিশ্বের অন্যতম বিস্ময় হিসেবে বিবেচিত হয়।
পিরামিড শুধু স্থাপত্য নয়, এটি প্রাচীন মিসরীয় সভ্যতার জ্ঞান, প্রযুক্তি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক অনন্য নিদর্শন। এত হাজার বছর পরেও এই নির্মাণ আজও মানুষকে বিস্মিত করে, গবেষকদের উৎসাহী করে, আর পর্যটকদের টানে পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে।