সিলে ব্যুরো:- আধ্যাতিক রাজধানী সিলেটের ফুটপাত আবারো হকারদের দখলে চলে গেছে। ফলে বিপাকে পড়েছেন পথচারীরা। আর হকারদেরকে ফুটপাতে বসিয়ে চলছে বেপরোয়া চাঁদাবাজি। আর এই চাঁদাবাজিতে জড়িত রয়েছেন সিসিক কর্মকর্তা ও কিছু পাতিনেতা ফলে কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না হকারদের।
সরেজমিন দেখা যায়, নগরীর কোর্ট পয়েন্ট, ক্বীন ব্রীজের উপর, জিন্দাবাজার পয়েন্ট, আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে শুরু করে সকল গুরুত্বপূর্ণ সড়ক দখলে নিয়েছে হকাররা। জোহরের নামাজের পর থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত রাস্তার দুপাশ দখল করে ব্যবসা পরিচালনা করছে অন্ত প্রায় দেড় হাজার ভাসমান হকার। নগরীর সড়কগুলোতে এখন হেঁটেচলাও দুষ্কর হয়ে পড়েছে। তবে এ বিষয়টি নিয়ে রহস্যজনক কারনে নিরব রয়েছে পুলিশ প্রশাসন।
নগরীর লালদিঘীরপারে হরকারদেরকে পুনর্বাসন করা হলেও বিগত ৫ আগষ্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর হকাররা আরও এক ধাপ এগিয়ে দখল করে বসেছেন একেবারে মাঝরাস্তা পর্যন্ত। যানবাহনগুলো কোনোরকমে রাস্তার একপাশ দিয়ে চলাচল করছে। এতে যানজটের মাত্রা আগের চেয়ে বহুগুণ বেড়েছে। এ অবস্থায়ও নীরব ভূমিকায় দেখা গেছে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের। এ নিয়ে জনমনেও ক্ষোভ বাড়ছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, নগরের বন্দরবাজার, সিটি পয়েন্ট, সুরমা মার্কেট, জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, লালদীঘিরপাড়, মদিনা মার্কেট, আম্বরখানা, উপশহর ও টিলাগড় এলাকার ফুটপাত এবং মূল সড়কের দুই পাশ দখল করে ভাসমান ব্যবসায়ীরা নিজেদের পসরা সাজিয়েছেন। এ অবস্থায় পথচারীদের হেঁটেচলাও দুষ্কর হয়ে পড়েছে। এসব এলাকা ছাড়াও নগরের আম্বরখানা থেকে সুরমা পয়েন্ট, তালতলা থেকে ধোপাদিঘীরপাড় পুরোটাই হকারদের দখলে চলে গেছে। এখন ফুটপাতে শাকসবজি, ফলমূল, কাপড়চোপড়, জুতা ও প্রসাধনসামগ্রী বিক্রি হচ্ছে।
বন্দরবাজার কালেক্টর মসজিদের মোড় থেকে রাস্তার উভয় পাশের ফুটপাত দখল করে দোকান বসানো হয়েছে। এর মধ্যে বাম পাশের সড়কের ফুটপাতের একপাশে চৌকি বসিয়ে কাপড়চোপড় ও জুতা কাপড় আরেক পাশে ভ্যানে করে শাকসবজি ও ফলমূলের পসরা সাজানো হয়েছে। আর মূল রাস্তার উপর গাড়ি দাঁড় করে অবৈধ স্ট্যান্ড ও যাত্রী উঠা-নামা করছে পরিবহণ শ্রমিকরা।
নগর ভবনের সামনের সড়কের ফুটপাত দখলের পাশাপাশি মূল সড়কেও বসানো হয়েছে দোকান। বন্দরবাজার, জেলরোডের সামনের সড়ক, মহাজনপট্টি, ওসমানী শিশু পার্ক পর্যন্ত এলাকার অবস্থা আরও ভয়াবহ। আধা কিলো সড়কের দু’পাশ দখল করে দোকান বসানো হয়েছে।
আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে বিমানবন্দর সড়ক, দরগাহ মাজার সড়কের কোথাও একপাশ আবার কোথাও দুপাশ দখল হয়ে গেছে। বাকি রাস্তায় অবৈধ স্ট্যান্ড বসানো হয়েছে। মূল সড়কে যানবাহন দাঁড় করিয়ে যাত্রী তোলা হচ্ছে। এ অবস্থায় পুরো পুরো নগরীজুড়েই তৈরি হয়েছে যানজট। মাত্র পাঁচ মিনিটে অতিক্রম করা যাবে এমন সড়ক পার হতে লাগছে আধা ঘণ্টা।
বিশৃঙ্খল পরিবেশ নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন যাত্রী ও পথচারীরা। তারা বলছেন, শহরের প্রাণকেন্দ্রে এমন যাচ্ছেতাই অবস্থা মেনে নেওয়ার নয়। মনে হচ্ছে দেখার কেউ নেই। এই দোকানগুলো রাস্তা ও ফুটপাত দখল করায় পথচারীদের চলাচলে যেমন অসুবিধা হয়, তেমনি যানজট বাড়ে এবং নগরীর সৌন্দর্যও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নগরীর ফুটপাতে এসব ভাসমান হকারদের কাছ থেকে প্রতিদিন দোকান প্রতি ৫০ টাকা থেকে ২শ টাকা পর্যন্ত চাঁদা উঠানো হয়। আর এর গুরু দায়িত্ব পালন করেন হকার নেতাদের নির্ধারিত লাইনম্যানরা। ফুটপাতে দেড় হাজার দোকান থেকে প্রতিদিন গড়ে ১শ টাকা করে চাঁদা আদায় হলেও তার পরিমাণ দাঁড়ায় দেড় লক্ষ টাকায়।
তারা প্রতিদিন চাঁদার টাকা উঠিয়ে সিসিকের কিছু কর্মকর্তা কর্মচারী থেকে শুরু করে স্থানীয় পাতিনেতাদের মধ্যে ভাগ ভাটোয়ারা করে নেন।
ব্যবসায়ীরা জানান, এখন ফুটপাত দখলমুক্ত করতে আগের মতো অভিযান চালানো হচ্ছেনা। মূলত দুপুরের পর থেকে হকাররা পসরা বসাতে শুরু করেন। সন্ধ্যার পর পুরো ফুটপাত হকারদের দখলে চলে যায়।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাহাম্মদ রজাই রাফিন সরকার বলেন, ফুটপাতগুলো দখলমুক্ত রাখতে সকলের সদিচ্ছার প্রয়োজন। দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর কিছু নেতার পৃষ্ঠপোষকতায় হকাররা ফুটপাত দখল করে ফেলছেন। তবে পথচারীদের চলাচল নির্বিঘ্নে করতে সিটি করপোরেশন শিগগিরই অভিযানে নামবে।
সিলেট মেট্রোপলিটন উপপুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান বলেন, ফুটপাত দখলমুক্ত রাখার কাজ মূলত সিটি করপোরেশনের। তবু আমরা জনসাধারণের স্বাভাবিক চলাচল নিশ্চিত করতে প্রায়ই অভিযান পরিচালনা করি।