সিনিয়র প্রতিবেদক:
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদাকে হেনস্তার ঘটনায় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা জড়িত ছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তবে এ ঘটনায় অভিযুক্তদের মধ্যে যিনি সরাসরি হেনস্তা করেছেন বলে ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
পুলিশের ভাষ্য, সাদা পাঞ্জাবি পরা যে ব্যক্তি সাবেক সিইসিকে জুতা দিয়ে মারছিলেন, তিনি স্বেচ্ছাসেবক দলের মুজাম্মেল হক ঢালী। তবে মুজাম্মেল দাবি করেছেন, তিনি সেখানে ছিলেন না এবং তাকে ফাঁসাতে ‘এআই’ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভিডিও বানানো হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক দল জানিয়েছে, এ বিষয়ে দলীয় তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।
জনগণের ভোট ছাড়াই নির্বাচন আয়োজনের অভিযোগে বিএনপির মামলার আসামি হওয়ার ছয় ঘণ্টার মধ্যেই রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কথিত ছাত্র-জনতা নুরুল হুদার উত্তরার বাসায় গিয়ে তাকে লাঞ্ছিত করে।
এসময় তাকে ডিম ছুঁড়ে মারা হয়, লুঙ্গি-গেঞ্জি পরা অবস্থায় নিচে নামিয়ে গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয় হামলাকারীরা।
সেখানে পুলিশের পোশাক পরা সদস্যদেরও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। ঘটনাটি হামলাকারীদের অনেকে ফেসবুকে লাইভ করেন, সেসব লাইভে তাকে পুলিশের পাশে দাঁড়িয়ে হেনস্থা করতে দেখা যায়।
এই ঘটনায় সমালোচনা তৈরি হয়েছে। দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলে বিবৃতি এসেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকেও।
এ ঘটনায় দলের কেউ জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
পুলিশ বলছে, এই ঘটনার নেতৃত্বে ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতারা। পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এ ঘটনার নেপথ্যে স্বেচ্ছাসেবক দলের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি শেখ ফরিদ হোসেনের থাকার কথা বলছেন।
তবে ওই কর্মকর্তা তদন্ত শেষের আগে নাম প্রকাশ করতে চাননি। পুলিশ জানিয়েছে, সাবেক সিইসিকে জুতা মারতে যাকে দেখা গেছে, তার নাম মুজাম্মেল হক ঢালী, তিনিও স্বেচ্ছাসেবক দলের সঙ্গে যুক্ত।
ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শেখ ফরিদ হোসেন বলেন, ঘটনার সময় তিনি সেখানে ছিলেন না, তিনি ছিলেন গুলশানে। ঘটনার পর তাকে সেখান থেকে কয়েকজন ফোন করলে তিনি তাদের আইন হাতে তুলে নিতে নিষেধ করেন।
শেখ ফরিদ বলেন, ‘আমি যেটা শুনেছি, উত্তেজিত জনগণ সাবেক সিইসিকে আটক করেছে উত্তরাতে। সেখানে আমাদের কিছু নেতাকর্মী ছিল, তারা আমাকে বলেছে, “ভাই আমরা এখানে আসছি, কিছু উত্তেজিত জনতা নুরুল হুদাকে হেনস্থা করার চেষ্টা করতেছে।”
আমি বললাম, “দেখো, আইন হাতে তুলে নেওয়া যাবে না। উনার শাস্তি বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী হবে। তোমরা থানায় যোগাযোগ করে পুলিশের কাছে ওনাকে দিয়ে দাও। কেউ যেন আইন হাতে তুলে না নেয়।” এরকম একটা বিষয় ছিল সেখানে।’
সাদা পাঞ্জাবি পরা মুজাম্মেল হক ঢালী নামের যে ব্যক্তি নুরুল হুদাকে গেঞ্জির কলার ধরে জুতা দিয়ে মারছিলেন তিনি স্বেচ্ছাসেবক দলে যুক্ত বলে জানা যাচ্ছে। তাকে চেনেন কিনা জানতে চাইলে শেখ ফরিদ বলেন, ‘আমি মুজাম্মেল হক ঢালীকে চিনি, সে আমাদের স্বেচ্ছাসেবক দল করে।
এখন আমি মুজাম্মেলের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। আমি তাকে বলেছি, “তুমি কেন আইন হাতে তুলে নিতে গেলে।” জবাবে সে বলেছে, “এটা ভাই আমাকে ফাঁসানোর জন্য এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে একটা ভিডিও এডিটিং করে আমাকে ওখানে দেখানো হয়েছে।”’
শেখ ফরিদ বলেন, ‘আমরা দলীয়ভাবে একটা তদন্ত কমিটি করেছি। কমিটির প্রতিবেদনটা কাল পেলে আমাদের দলীয় ব্যবস্থা নিয়ে নেব।’
পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার মহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এ ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। পুরো ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে একটি জিডি হয়েছে। এই জিডির ভিত্তিতে ভিডিও ফুটেজ ধরে আমরা তদন্ত করছি। আমরা তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। আমরা কী অবস্থায় তাকে (নুরুল হুদাকে) পেলাম, কারা তাকে ধরল, এসব বিষয়ে বিস্তারিত খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
সোমবার রাতে এ ঘটনায় একজনকে আটকের কথা ছড়ায়। তবে পুলিশ এ ঘটনায় কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করেনি বলে জানিয়েছেন উত্তরার উপকমিশনার।