যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর হামলার জবাবে হরমুজ প্রণালি বন্ধের প্রস্তাব পাস করেছে ইরানের পার্লামেন্ট। এই পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা দেখছেন একটি কৌশলগত পাল্টাঘাত হিসেবে। হরমুজ প্রণালি, যাকে ‘তুরুপের তাস’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, সেটি বন্ধ হলে এর প্রভাব শুধু মধ্যপ্রাচ্যেই নয়, সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে ভয়াবহভাবে পড়তে পারে।
বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এবং জ্বালানি পরিবহন পথ হলো হরমুজ প্রণালি। এটি ইরান ও ওমানের মাঝখানে অবস্থিত এবং পারস্য উপসাগরের উত্তরের দেশগুলোকে ওমান উপসাগর ও আরব সাগরের সঙ্গে সংযুক্ত করে। প্রতিদিন এই প্রণালির মাধ্যমে প্রায় ২০ মিলিয়ন ব্যারেল তেল পরিবাহিত হয়, যা বিশ্বব্যাপী মোট তেল সরবরাহের এক-পঞ্চমাংশেরও বেশি। তেল ছাড়াও এই পথ দিয়ে বিপুল পরিমাণ তরল প্রাকৃতিক গ্যাসও বিশ্ববাজারে যায়।
সৌদি আরব, ইরান, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইরাক—বিশেষত ওপেকভুক্ত দেশগুলোর জন্য এই প্রণালি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি পথ। ২০২২ সালের শুরু থেকে প্রতিদিন গড়ে ১ কোটি ৭৮ লাখ থেকে ২ কোটি ৮ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল, হালকা তেল (কনডেনসেট) এবং অন্যান্য জ্বালানি সামগ্রী এই পথেই গন্তব্যে পৌঁছেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, হরমুজ প্রণালি বন্ধ হয়ে গেলে জ্বালানি সরবরাহে বিশাল ধস নামবে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম হঠাৎ করেই আকাশচুম্বী হয়ে উঠবে। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রে মুদ্রাস্ফীতির প্রবণতা আরও জোরালো হবে, যা বাইডেন প্রশাসনের জন্য বড় ধরনের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপ তৈরি করবে।
যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই ইরানকে হুঁশিয়ার করে বলেছে, হরমুজ প্রণালি বন্ধ করা হলে তা হবে ইরানের ‘অর্থনৈতিক আত্মহত্যা’। তবে ইরান এখনো স্পষ্টভাবে জানায়নি তারা এই প্রস্তাব কার্যকর করতে যাচ্ছে কি না। বিশ্ব এখন তাকিয়ে রয়েছে, তেহরান কীভাবে এই কৌশলগত সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন ঘটায়।
এই সংকট আরও তীব্র হলে তা সরাসরি প্রভাব ফেলবে বৈশ্বিক পণ্য পরিবহন, জ্বালানি নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায়। বিশেষ করে ইউরোপ ও এশিয়ার অনেক দেশ তেলের জন্য এই পথের ওপর নির্ভরশীল। ফলে হরমুজ প্রণালিকে ঘিরে শুরু হতে পারে এক নতুন ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার অধ্যায়।