তেল আবিব, ইসরাইল :
“আমার ছয় বছরের মেয়েটাকে বহুদিন দেখিনি। ভেবেছিলাম সামনের মাসে বাড়ি যাব। কিন্তু ইরানের সাথে সংঘর্ষ বেঁধে গেল। এখন জানি না, কবে যেতে পারব,” — ইসরাইলের তেল আবিব শহর থেকে এভাবেই বলছিলেন কর্ণাটক নিবাসী রাঘবেন্দ্র নাইক, যিনি গত ১৩ বছর ধরে সেখানে কেয়ার গিভারের কাজ করছেন।
ইরান ও ইসরাইলের চলমান সংঘাতে আতঙ্কে আছেন হাজারো ভারতীয় কর্মী, যাদের অধিকাংশই কেয়ার গিভার ও নির্মাণশ্রমিক। ভারতীয় দূতাবাসের তথ্যমতে, ইসরাইলে বর্তমানে আনুমানিক ২০ হাজার ভারতীয় কর্মী রয়েছেন, তবে বেসরকারিভাবে এই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ যুদ্ধ পরিস্থিতিতে দেশে ফিরে যাওয়ার চিন্তাও করছেন।
সাইরেন বাজলেই ছুটে যান বাঙ্কারে
“রাতে ঘুম হয় না। কখন সাইরেন বাজে আর বাঙ্কারে দৌড়াতে হয় — এটা এখনকার রুটিন হয়ে গেছে,” বলেন নাইক। সোমা রভি নামের আরেকজন ভারতীয় কেয়ার গিভারও একই অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন, যিনি ইসরাইলে আছেন প্রায় দুই দশক ধরে।
তেল আবিবসহ বিভিন্ন শহরে কেয়ার গিভারদের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল ইসরাইলের প্রবীণ নাগরিকরা। একজন ৮০ বছর বয়সী নাগরিক নিসিন মোসেরি বলেন, “আমার ছেলেরা আমেরিকায় থাকে। বাঁচার জন্যও আমাকে আমার ভারতীয় কেয়ার গিভারের ওপর নির্ভর করতে হয়।”
বিশেষ বিমানে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, ইসরাইলের পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা হচ্ছে। প্রয়োজন হলে ভারতীয় নাগরিকদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে এনে বিশেষ বিমানে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। যারা দেশে ফিরতে চান, তাদেরকে ভারতীয় দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
কেন ইসরাইল পছন্দ ভারতীয় কর্মীদের?
ম্যাঙ্গালোরের বাসিন্দা পি এন লরেন্স বলেন, “যুদ্ধ সত্ত্বেও ইসরাইলে কাজের পরিবেশ ভালো, মাইনে ভালো। সরকার স্বাস্থ্যবিমা, থাকার সুবিধা দেয়। আমার পরিবার ভারতের মাটিতে আমার উপার্জনের ওপর নির্ভর করে।”
ইসরাইলে ভারতীয় ইহুদিদের অবস্থান
এছাড়া ইসরাইলে বর্তমানে ৮৫ হাজার ভারতীয় বংশোদ্ভূত ইহুদি বাস করছেন। ৫০-৬০-এর দশকে তারা মূলত মহারাষ্ট্র, কেরালা, কলকাতা থেকে গিয়েছিলেন। তাদের অনেকেই বর্তমানে স্থায়ীভাবে ইসরাইলে বসবাস করছেন এবং মিলিটারি সার্ভিসেও অংশ নিচ্ছেন।
ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত, আতঙ্কে দিন কাটছে
ইসরাইলের বিভিন্ন অঞ্চলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্কে দিন কাটছে সবার। কেউ কেউ বলছেন, “চতুর্দিকে যেন মৃত্যু ফাঁদ। কোথায় যাব?” — বলেন ইয়াকভ টকার নামে এক প্রবাসী।
রাঘবেন্দ্র নাইক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তিনি দেশে ফিরে যাবেন। “এখন মনে হচ্ছে, যুদ্ধ আর সহ্য হয় না। বাড়ি ফিরলেই শান্তি পাব,” — জানালেন তিনি।