দেশজুড়ে আবারও বাড়তে শুরু করেছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। চলতি বছরের শুরু থেকেই ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। শুক্রবার (২১ জুন) সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে আরও ১৫১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে ২০২৫ সালে এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৭৭ জনে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আক্রান্তদের মধ্যে এককভাবে বরিশাল বিভাগেই শনাক্ত হয়েছেন ৩ হাজার ২৮০ জন, যা মোট আক্রান্তের প্রায় ৪৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ। এ বিভাগে ডেঙ্গু রোগীর তুলনায় হাসপাতালে শয্যার ঘাটতি রয়েছে বলে জানা গেছে।
বিভাগভিত্তিক তথ্য অনুসারে—
- বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে): ৮৬ জন
- ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে): ১৭ জন
- ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন: ১৮ জন
- ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন: ১০ জন
- চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে): ১৫ জন
- খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে): ৩ জন
- রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে): ২ জন
চিকিৎসা সংকট প্রকট বরিশাল ও বরগুনায়
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিদিনই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বরিশাল ও বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে পর্যাপ্ত শয্যা না থাকায় সংকটাপন্ন রোগীদের চিকিৎসা নিয়ে তৈরি হয়েছে জটিলতা। রোগীরা অভিযোগ করেছেন, অনেক স্থানে স্যালাইন ও ওষুধের ঘাটতি রয়েছে। প্লাটিলেট সংগ্রহ করতেও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
মশক নিধনে ঘাটতি, কার্যকর উদ্যোগের দাবি
এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী হিসেবে বিশেষজ্ঞরা মশক নিধন কার্যক্রমের দুর্বলতাকে চিহ্নিত করছেন। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, “মশক নিধন কার্যক্রম প্রত্যাশিত মাত্রায় হয়নি বলেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। একা কোনো সংস্থার পক্ষে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। জাতীয়ভাবে একটি সমন্বিত কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।”
হটস্পট ব্যবস্থাপনায় জোর দেওয়ার আহ্বান
কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, “ডেঙ্গু রোগীকে ঘিরে হটস্পট নির্ধারণ করে তার চারপাশে ২০০ মিটার এলাকায় ফগিং চালাতে হবে। পাশাপাশি ব্রিডিং সোর্স (যেখানে মশা জন্মায়) ধ্বংস করতে হবে। এ ক্ষেত্রে নগরবাসীকেও সচেতন হতে হবে।”
পূর্বের বছরগুলোর তুলনামূলক চিত্র
গত ২০২৪ সালে দেশে মোট ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন, এবং মৃত্যু হয়েছিল ৫৭৫ জনের। এর আগের বছর ২০২৩ সালে রেকর্ডসংখ্যক ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং প্রাণ হারিয়েছিলেন ১ হাজার ৭০৫ জন।
চলতি বছর মাত্র জুন মাসেই আক্রান্তের সংখ্যা সাত হাজার ছাড়িয়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, ডেঙ্গুর প্রকোপ এবারও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।