রুশাইদ আহমেদ, বেরোবি:
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মাহামুদুল হকের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।
শুক্রবার (২০ জুন) বেলা সাড়ে ১১টায় এবং জুমার নামাজের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডিয়া চত্বর ও প্রধান ফটকে বিভাগের শিক্ষক ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়।
‘ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ফাঁসানো হয়েছে’
বক্তারা অভিযোগ করেন, “জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকার” কারণে মাহামুদুল হককে একটি “মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলায় ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয়েছে।” বক্তারা বলেন, এক ব্যক্তির হৃদরোগে মৃত্যু হওয়া সত্ত্বেও মাহামুদুল হককে ওই মৃত্যুর দায়ে দায়ী করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ অন্যায় ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম বলেন,
“মাহামুদুল হক মামলার ৫৪তম আসামি হলেও তাকেই সবার আগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অথচ অন্য কাউকে আটক করা হয়নি। এটি পরিকল্পিত হয়রানির শামিল।”
স্ত্রী-সন্তানের আবেগঘন আহ্বান
মানববন্ধনে মাহামুদুল হকের স্ত্রী মাসুবা হাসান মুন এবং সন্তান মাইমুন মিহরানও বক্তব্য দেন। তাঁরা বলেন,
“গ্রেপ্তারের সময় কোনো পূর্ব নোটিশ বা আইনজীবী প্রেরণ করা হয়নি। সাজানো চার্জশিটে তাঁকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। তিনি আমাদের পরিবারের একমাত্র অবলম্বন।”
২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম, না হলে থানা ঘেরাও
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার সোহাগ বলেন,
“জুলাই আন্দোলনের পক্ষে কথা বলার অপরাধেই যদি একজন শিক্ষক গ্রেপ্তার হন, তবে আমাদের আন্দোলনের ভবিষ্যৎ কি হতে পারে, তা বোঝাই যাচ্ছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্যারের মুক্তি দিতে হবে, না হলে থানা ঘেরাওসহ কঠোর কর্মসূচিতে যাব।”
সমাবেশ শেষে শিক্ষার্থীরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মাহামুদুল হকের মুক্তির আলটিমেটাম দেন। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানানো হয়। এছাড়া তাঁকে মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।
পটভূমি: ১০ মাস পর হত্যা মামলা, একমাত্র গ্রেপ্তার মাহামুদুল
উল্লেখ্য, গত বছরের ২ আগস্ট রংপুরের হাজিরহাটে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালানোর সময় সমেছ উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এ ঘটনায় প্রায় ১০ মাস পর, চলতি বছরের ৩ জুন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ৫৪ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।
মাহামুদুল হক ছিলেন মামলার ৫৪তম আসামি। কিন্তু ১৯ জুন বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শেষে বাসায় ফেরার পথে তাকেই প্রথম গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এখনও মামলার অন্য কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
সামাজিক মাধ্যমে আলোড়ন, আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়াও
বিষয়টি নিয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। মামলার ‘সত্যতা’ নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। দেশ-বিদেশের সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা মাহামুদুল হকের দ্রুত মুক্তি দাবি করছেন।
‘বিচার বিভাগীয় তদন্ত’-এর প্রথম দাবিদাতা
গত বছরের জুলাই আন্দোলনের সময় আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের পর মাহামুদুল হক তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে প্রথমবারের মতো পুলিশের বদলে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছিলেন। অনেকের মতে, সেই বক্তব্যই তাঁর বিরুদ্ধে বর্তমান হয়রানির সূচনা হতে পারে।
সাংবাদিকতা থেকে শিক্ষকতা পর্যন্ত পথচলা
২০১৯ সালে বেরোবিতে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেওয়ার আগে মাহামুদুল হক দ্য ডেইলি স্টারে মেট্রো এডিটর এবং ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশের (ইউএনবি) সাব-এডিটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন।