প্রতিবেদক, ইকরাম হাসান:
কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি উপজেলায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা, বাড়ছে মৃত্যুও। বিশেষ করে পৌরসভার ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডে ডেঙ্গুর প্রকোপ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় এলাকাদুটিকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে ঘোষণা করেছে পৌর প্রশাসন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দোনারচর, সবজিকান্দি, দাউদকান্দি, সাহাপাড়া, বলদাখাল ও তুজারভাঙ্গা—এই ছয়টি গ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মে মাস থেকে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ৬০০ জন। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ২৫০ জনেরও বেশি মানুষ।
এ পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন অন্তত তিনজন—দোনারচরের ইউসুফ আলী, নাজির চৌধুরীর স্ত্রী মাকসুদা বেগম এবং রাসেল আহমেদের স্ত্রী শাহিনুর আক্তার।
৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর বিল্লাল হোসেন খন্দকার সুমন বলেন, “ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। প্রতিটি ঘরেই কেউ না কেউ আক্রান্ত। মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে ঝোপঝাড় পরিষ্কার, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও ফগার মেশিনে নিয়মিত ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।”
দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. হাবিবুর রহমান জানান, “জুন মাস থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন ১০২ জন, যাদের মধ্যে ২৮ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন আরও ২৫৮ জন। স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রস্তুত রয়েছে এবং সবার দ্রুত চিকিৎসা নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে।”
ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতামূলক উদ্যোগ নিচ্ছে বিভিন্ন সংগঠন ও শিক্ষার্থীরা। সমাজকর্মী ও আইনজীবী রাসেল রাফি জানান, “আমরা লিফলেট বিতরণ, মাইকিং ও বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণের মতো কার্যক্রম শুরু করেছি।”
দাউদকান্দি পৌর প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রেদওয়ান ইসলাম বলেন, “ডেঙ্গুর সংক্রমণ সর্বাধিক ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডে। তাই এলাকাগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে প্রতিদিন ফগার মেশিনে উচ্চমাত্রার ওষুধ প্রয়োগসহ নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।”
স্থানীয়দের মতে, একমাত্র সচেতনতা ও সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই এই সংকট মোকাবিলা সম্ভব। তাই প্রশাসনের পাশাপাশি নাগরিকদেরও সচেতন ও দায়িত্বশীল হয়ে নিজেদের চারপাশ পরিচ্ছন্ন রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।