কাপ্তাই (রাঙামাটি) প্রতিনিধি:
রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলায় শিশুদের দিয়ে জোরপূর্বক হোটেল শ্রমে নিযুক্ত করার অভিযোগে স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে চার শিশু শ্রমিককে উদ্ধার করা হয়েছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার (১৮ জুন) সন্ধ্যায় কাপ্তাই উপজেলার চিৎমরম ইউনিয়নের কেয়াংঘাট এলাকার একটি হোটেলে অভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধার করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রুহুল আমিনের নেতৃত্বে পরিচালিত এই অভিযানে সহায়তা করে চন্দ্রঘোনা থানা পুলিশ ও ৪১ বিজিবি। উদ্ধার করা চার শিশুর মধ্যে তিনজনের বাড়ি রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার যৌথ খামার এলাকায় এবং একজন কাপ্তাই উপজেলার ওয়াগ্গা ইউনিয়নের মুরালীপাড়ার বাসিন্দা।
উদ্ধারকৃত শিশুদের মধ্যে রয়েছেন:
- অংথোয়াইপ্রু মারমা (১০)
- সুইথুইমং মারমা
- পাইসাচিং মারমা (১২)
- হ্লাখ্যাইচিং মারমা (১১)
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও শতাধিক গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে শিশুদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ৩ নম্বর চিৎমরম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়েশ্লিমং চৌধুরী ও ইউপি সদস্য ক্যপ্রু চৌধুরী।
ইউএনও মো. রুহুল আমিন জানান, “গোপন সূত্রে খবর পাই যে, পড়াশোনার কথা বলে শিশুদের হোটেলে নিয়ে আসা হয় এবং সেখানে তাদের দিয়ে জোরপূর্বক কাজ করানো হয়। ঘটনাস্থলে গিয়ে শিশুদের সঙ্গে কথা বললে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় তাদের উদ্ধার করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।”
উদ্ধার হওয়া শিশুরা জানায়, হোটেলে তাদের দিয়ে ভারী কাজ করানো হতো, দেওয়া হতো না পর্যাপ্ত খাবার। কাজ না পারলে মারধর করা হতো এবং মিথ্যা অভিযোগে ভয় দেখিয়ে জোর করে হোটেলের কাজ করানো হতো। এক শিশুর ভাষ্য, “মোবাইল ও টাকা হাতে দিয়ে আমাদের ভিডিও করে বলা হতো, এসব নিয়ে পালাতে চেয়েছি—পুলিশে ধরিয়ে দেওয়া হবে।”
অভিযানের সময় অভিযুক্ত হোটেল মালিক কিশোর ত্রিপুরা ও তার স্ত্রী হ্লাসুইনুং মারমাকে পাওয়া যায়নি। তবে আরেক মালিক নাইউমা চৌধুরী এবং ববি মারমা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “শিশুদের নির্যাতনের অভিযোগ সত্য নয়।”
চেয়ারম্যান ওয়েশ্লিমং চৌধুরী বলেন, “অভিভাবকরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমি হোটেল মালিকদের বলি শিশুদের ছেড়ে দিতে। তারা দাবি করে অভিভাবকদের কাছে টাকা পায়।” ইউপি সদস্য ক্যপ্রু চৌধুরীও ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন এবং শিশুদের মুক্তির জন্য আগেই অনুরোধ করেছিলেন বলে জানান।
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় তদন্ত ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।