মোঃ মনির হোসেন সোহেল, চাটখিল প্রতিনিধি:
নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার দক্ষিণ রামনারায়নপুর গ্রামে ঘটেছে হৃদয়বিদারক এক ঘটনা। এক বাড়িতে বিয়ের আনন্দ, আরেক ঘরে স্বজন হারানোর কান্না—তবে সবচেয়ে হৃদয় ভাঙা চিত্র ছিল লাশ বহনে প্রতিবন্ধকতা।
শনিবার (১৪ জুন) বিকেলে মাইন উদ্দিন বেপারী বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন জহিরুল ইসলাম (৫৫)। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর মৃত্যুবরণ করলেও, মৃত্যুর ১২ ঘণ্টা পরেও তার লাশ কবরস্থানে নেওয়া সম্ভব হয়নি। কারণ, প্রতিবেশী নূরনবী দফাদার ও মরিয়ম নেছা দীর্ঘদিন ধরে প্রায় ৩০টি পরিবারের চলাচলের পথ বন্ধ করে রেখেছেন।
লাশ বহনে বাধা, ‘বরই কাটার ঢাল’ দিয়ে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, জহিরুল ইসলামের জানাজা ও দাফন সম্পন্ন করতে গিয়ে কঠিন বিপাকে পড়েন তারা। চলাচলের মূল রাস্তাটি ইচ্ছাকৃতভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয় বরই গাছের কাঁটাযুক্ত ঢাল দিয়ে। এতে লাশ নিয়ে এক মিনিটের রাস্তা পেরোতে সময় লেগেছে প্রায় ৩০ মিনিট, যেখানে স্বজনরা কাঁদতে কাঁদতে সেই অমানবিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করেন।
মানবতার করুণ পরাজয়
এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন,
“এই পরিবার দীর্ঘদিন ধরে পথ আটকে মানবতা ও সহমর্মিতাকে পায়ের নিচে ফেলে দিয়েছে। বিয়ের আনন্দ চললেও পাশের ঘরে স্বজন হারানো মানুষের কষ্ট তারা বুঝেননি।”
তারা আরও বলেন, স্কুল, মসজিদ, ইউনিয়ন অফিস ও মাদরাসায় যাতায়াতের একমাত্র রাস্তাটি প্রভাবশালী পরিবারটি দখলে নিয়ে রেখেছে। স্থানীয় সালিশ ও ইউনিয়ন পরিষদের রায় অমান্য করে বারবার প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে তারা।
জনপ্রতিনিধির মন্তব্য
রাম নারায়নপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ বাহার বলেন,
“এই রাস্তাটি স্থানীয়দের ন্যায্য অধিকার। একাধিকবার সালিশ ও ভূমি অফিসের রায়ে বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হলেও অভিযুক্ত পরিবার তা মানছে না।”
এলাকাবাসীর দাবি
স্থানীয়রা এ ঘটনার কঠোর প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন,
“যেখানে এক ঘরে বিয়ের উৎসব আর পাশের ঘরে লাশ, সেখানে সহানুভূতির পরিবর্তে রাস্তায় কাঁটা বিছিয়ে দেওয়া—এটা কোনো সভ্য সমাজে হতে পারে না। আমরা দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চাই।”