ইরানের বিভিন্ন স্থানে আজ ভোররাতে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনাসহ ১০০টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে এই হামলা পরিচালিত হয়েছে। এতে ইরানের সেনাবাহিনীর শীর্ষ কমান্ডার ও কয়েকজন বিশিষ্ট পরমাণুবিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিবসহ বিশ্বনেতারা উত্তেজনা কমানোর জন্য সব পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফক্স নিউজকে বলেছেন, তিনি আগেই বুঝতে পেরেছিলেন ইসরায়েলের এই হামলা ঘটবে। তিনি জানিয়েছেন, ইরানের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র থাকা মোটেই কাম্য নয় এবং যুক্তরাষ্ট্র আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করবে। তবে, ইরান যদি পাল্টা হামলা চালায়, তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল নিজেদের রক্ষা করতে প্রস্তুত রয়েছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস মধ্যপ্রাচ্যে বড় ধরনের সামরিক সংঘাত এড়াতে সকল পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর উপমুখপাত্র ফারহান হক উল্লেখ করেন, মহাসচিব সামরিক উত্তেজনা বাড়ার যে কোনো চেষ্টা রোধে দৃঢ় অবস্থানে রয়েছেন এবং ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এই হামলা এমন সময় ঘটেছে যখন ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছিল।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেন, ইসরায়েলের এই হামলার পরিণতি কী হতে পারে তা নিয়ে তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তিনি আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং উত্তেজনা বৃদ্ধি রোধে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান। মধ্যস্থতাকারী দেশ ওমানও এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে এবং এটিকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করেছে। ওমানের বিবৃতিতে ইসরায়েলকে সরাসরি দায়ী করা হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।
জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাকেশি ইওয়াইয়া এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, এটি মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। তিনি সব পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম দেখানোর এবং দ্রুত শান্তি স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
সৌদি আরবও ইসরায়েলের এই আগ্রাসনকে কঠোরভাবে নিন্দা জানিয়েছে। তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলা ইরানের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার পরোক্ষে ক্ষতি করেছে এবং আন্তর্জাতিক নিয়মকানুনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। এই কর্মকাণ্ড আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ।
রাশিয়া ও তুরস্কও ইসরায়েলের এই হামলার বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন, এই হঠাৎ এবং ভয়াবহ উত্তেজনার বিষয়ে রাশিয়া গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং নিন্দা জানাচ্ছে। রাশিয়ার দূতাবাস তাদের নাগরিকদের ইসরায়েল ত্যাগ করার পরামর্শ দিয়েছে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এই অঞ্চলে যাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করেছে।
তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করে তা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলেছে, এই হামলা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও শান্তির জন্য গুরুতর হুমকি।
বর্তমান পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা তীব্র আকার ধারণ করেছে এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে এটি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মহল অবিলম্বে সংযম ও সংলাপের মাধ্যমে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানাচ্ছে।