জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী বলেছেন, দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ হবে দেশের জনগণের মাধ্যমে, বিদেশি মাটিতে বসে নয়। তিনি বলেন, দেশের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত লন্ডন কিংবা অন্য কোনো বিদেশি শহরে মিটিং করে নেওয়া জনগণের সঙ্গে প্রতারণা এবং শহীদদের রক্তের সঙ্গে অবমাননার শামিল। তিনি অভিযোগ করেন, বর্তমান সরকার জনগণের আকাঙ্ক্ষা ও গণতান্ত্রিক চেতনার বিরুদ্ধে কাজ করে দেশকে আবার পেছনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
নাসির উদ্দিন বলেন, জনগণের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল ২৪ জানুয়ারির গণঅভ্যুত্থানের শহীদ ও আহতদের বিচার সম্পন্ন করা, নতুন সংবিধান প্রণয়ন এবং কার্যকর রাজনৈতিক সংস্কার চালু করা। কিন্তু সরকারের পদক্ষেপে সেই পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে। তিনি মনে করেন, বর্তমান বাস্তবতায় দেশে একটি নতুন ‘জাতীয় বন্দোবস্ত’ প্রয়োজন, যা জনগণের ইচ্ছার ভিত্তিতে হবে—না যে কোনো দলের স্বার্থে।
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, সরকার যদি বিচার, সংস্কার ও নতুন সংবিধান প্রণয়নে ব্যর্থ হয়, তাহলে এনসিপি দ্বিতীয় গণঅভ্যুত্থানের পথে হাঁটতে বাধ্য হবে। এমনকি সুষ্ঠু রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ছাড়া কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বলেও জানান তিনি। তার মতে, শুধু রাজা বা রানী বদল করলেই চলবে না—প্রয়োজন কাঠামোগত পরিবর্তন।
তিনি বলেন, শহীদদের আত্মত্যাগের মর্যাদা দিতে হলে সরকারকে গ্রামে-গঞ্জে সাধারণ মানুষের কাছে যেতে হবে, জানতে হবে তাদের প্রকৃত চাওয়া। জনগণের কষ্ট ও বেদনার প্রতিফলন না বুঝলে কোনো সংস্কারই টেকসই হবে না।
বিএনপির ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। বলেন, একসময় বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি তুললেও এখন রোজার আগেই তারা সময়সীমা শেষ করেছে। অথচ আজ পর্যন্ত দলটি কোনো বিচার, ঘোষণাপত্র বা সংবিধান সংশোধনের সুস্পষ্ট রূপরেখা দেয়নি। তিনি মনে করেন, বিএনপি কেবল ক্ষমতার ভাগ বসাতে আগ্রহী, জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিনিধিত্ব করছে না।
সরকার ও বিএনপি উভয়কে দায়ী করে নাসির উদ্দিন বলেন, এই দুই পক্ষ একযোগে দেশের জনগণকে পাশ কাটিয়ে একটি গভীর সংকট তৈরি করেছে। কিন্তু জনগণ অতীতেও লড়েছে, ভবিষ্যতেও লড়বে। জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া কোনো সরকারই বৈধ হতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, শুধু নির্বাচন আয়োজন করলেই গণতন্ত্র হয় না। সুষ্ঠু বিচার, সাংবিধানিক সংস্কার ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ছাড়া ভোটের কোনো মূল্য নেই। বর্তমান নির্বাচন কমিশন জনগণের আস্থা হারিয়েছে, যা একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক শক্তির হয়ে কাজ করছে। তাই নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, আরপিও সংশোধন এবং জাতীয় ঐকমতের ভিত্তিতে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্রের উত্তরণ সম্ভব নয়।
নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী দৃঢ়কণ্ঠে জানান, বাংলাদেশ আজ একটি সংকটময় সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। এই সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হলো—বিচার, সংস্কার, নতুন সংবিধান এবং জনগণের ম্যান্ডেটভিত্তিক একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। না হলে আবারও গণআন্দোলন আসবে, আর সেই আন্দোলন হবে আগের চেয়েও বেশি সুসংগঠিত ও প্রবল।