ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের ২১তম আসরের পর্দা উঠছে যুক্তরাষ্ট্রে রোববার ভোরে। প্রথমবারের মতো ৩২ দলের অংশগ্রহণে হতে যাওয়া এই টুর্নামেন্ট নিয়ে ফুটবল ভক্তদের কৌতূহলের কমতি নেই। টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হবে স্বাগতিক লিওনেল মেসির ইন্টার মায়ামি ও আফ্রিকার জায়ান্ট মিশরের আল আহলি। এরই মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্লাবগুলো যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছাতে শুরু করেছে।
ইউরোপের সেরা ক্লাবগুলোর মধ্যে রিয়াল মাদ্রিদ, ইন্টার মিলান, বায়ার্ন মিউনিখ ও পিএসজি খেললেও এই আসরে জায়গা হয়নি বার্সেলোনা, এসি মিলান বা লিভারপুলের মতো জনপ্রিয় ক্লাবগুলোর। যার কারণে টুর্নামেন্টের জনপ্রিয়তায় কিছুটা ভাটা পড়েছে বলে মনে করছেন ফুটবল বিশ্লেষকরা। ক্লাব বিশ্বকাপে অংশ নেওয়ার জন্য আলাদা করে কোনো বাছাই পর্ব হয় না, বরং ২০২১ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে মহাদেশীয় চ্যাম্পিয়ন ও উচ্চ র্যাংকিংধারী ক্লাবগুলোই খেলছে এবারের আসরে।
এবার ইউরোপ থেকে সর্বোচ্চ ১২টি, দক্ষিণ আমেরিকা থেকে ৬টি, এশিয়া, আফ্রিকা ও উত্তর-মধ্য আমেরিকা থেকে ৪টি করে ক্লাব অংশ নিচ্ছে। সঙ্গে আছে ওশেনিয়ার একটি ক্লাব ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে স্বাগতিক হিসেবে ইন্টার মায়ামি এবং প্লে-অফ বিজয়ী লস অ্যাঞ্জেলস।
আগামী বছর ৪৮ দলের বিশাল পরিসরের বিশ্বকাপ আয়োজন করবে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকো। একইভাবে ২০৩১ সালের নারী বিশ্বকাপেও থাকবে ৪৮ দল। সেই ধারাবাহিকতায় ফিফা সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্লাব বিশ্বকাপও চার বছর পরপর অনুষ্ঠিত হবে। ফলে ২০২৯ সালে হতে যাওয়া ২২তম আসর হবে আরও বড় আকারে, যেখানে ফিফার পরিকল্পনায় রয়েছে ৪৮ দলের অংশগ্রহণ এবং চ্যাম্পিয়ন দলকে ১ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত পুরস্কার দেওয়ার সম্ভাবনা। এবারের আসরে চ্যাম্পিয়ন পাবে ১২৫.৮ মিলিয়ন ডলার, যা সর্বশেষ চ্যাম্পিয়ন লিগজয়ী পিএসজির প্রাপ্ত অর্থের তুলনায় প্রায় ২৫ মিলিয়ন পাউন্ড কম।
ফিফার সাধারণ সম্পাদক ম্যাটিয়াস গ্রাফস্ট্রোম সম্প্রতি জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে টুর্নামেন্টের ফরম্যাট, কাঠামো ও বাণিজ্যিক দিক নিয়ে ক্লাব ও কনফেডারেশনগুলোর সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করে বড় পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। তিনি বিশ্বাস করেন, ক্লাব বিশ্বকাপ আগামীতে আরও জনপ্রিয়তা অর্জন করবে।
তবে সবকিছু এত সহজ নয়। ক্লাব বিশ্বকাপ সম্প্রসারণ নিয়ে ইতিমধ্যেই বিরোধিতা করেছে আন্তর্জাতিক খেলোয়াড় ইউনিয়ন ফিফপ্রো। ইউরোপা লিগ ফিফার বিরুদ্ধে ইউরোপীয় কমিশনের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছে, যেখানে ফিফার বিরুদ্ধে সময়সূচি ঠিক করতে সংশ্লিষ্টদের মত না নেওয়ার এবং ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’-এর অভিযোগ আনা হয়েছে। যদিও ফিফা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, কিছু লীগ ভিত্তিহীন বাণিজ্যিক স্বার্থে এসব করছে। অভিযোগ তদন্ত করা হবে কিনা, তা এখনো জানায়নি ইউরোপীয় কমিশন।
সব মিলিয়ে নতুন রূপে শুরু হতে যাওয়া ক্লাব বিশ্বকাপ শুধু মাঠের লড়াই নয়, বরং ভবিষ্যতের ফুটবল কাঠামোরও বড় পরীক্ষায় পরিণত হতে যাচ্ছে।