ঢাকা প্রতিনিধি:
নির্বাচনের আগে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নাটকীয় মোড়—নিজের বিদায়ের বার্তা জানালেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা।জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে তিনি স্পষ্টভাবে জানান, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করে তিনি দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াবেন।
ভাষণে তিনি বলেন, “আমি এই দায়িত্ব নিয়েছি একটি নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে। আমার দায়িত্ব নির্বাচন শেষেই শেষ হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে এই দায়িত্বকে দীর্ঘমেয়াদে টেনে নেওয়ার পক্ষে নই।”
গভীর প্রতিশ্রুতি, কিন্তু চাপের বাস্তবতা
প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করেন যে, নির্বাচন প্রক্রিয়া যাতে সকল পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়, সে লক্ষ্যে তার সরকার কাজ করে যাচ্ছে। তবে তিনি স্বীকার করেন, রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক অবিশ্বাস, আবহাওয়া সংকট, এবং প্রশাসনিক কাঠামোর সীমাবদ্ধতা তার সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দল এই বক্তব্যকে ‘সময়ক্ষেপণের কৌশল’ বলে আখ্যায়িত করেছে। তারা মনে করে, প্রধান উপদেষ্টা নিজের অবস্থান থেকে একধরনের পিছু হঠার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, এবং এতে করে অবাধ নির্বাচনের আশা আরও ক্ষীণ হয়ে পড়েছে।
বিএনপির প্রতিক্রিয়া
প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পরপরই এক বিবৃতিতে বিএনপি বলেছে, “বিদায় ঘোষণার মাধ্যমে তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন যে, এই সরকারের পক্ষে নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয়। আমরা ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছি, এবং সেটি না হলে গণআন্দোলনের পথে যাওয়া ছাড়া আর কোনো পথ খোলা থাকবে না।”
জনগণের মিশ্র প্রতিক্রিয়া
সাধারণ জনগণের মধ্যে এই ঘোষণাকে ঘিরে দেখা গেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ কেউ এটিকে আত্মসমালোচনার সাহস হিসেবে দেখলেও, অনেকেই একে দায়িত্ব এড়ানোর কৌশল হিসেবে ব্যাখ্যা করছেন।
ঢাকার এক বাসিন্দা বলেন, “যদি বিদায়ই নিতে চান, তাহলে এখনই নেন। কেন পুরো জাতিকে অনিশ্চয়তায় রাখছেন?” অন্যদিকে কেউ কেউ বলছেন, “কমপক্ষে উনি স্পষ্ট করে বলছেন উনার সীমাবদ্ধতা ও দায়বদ্ধতার কথা—এটা প্রশংসার দাবিদার।”
প্রধান উপদেষ্টার বিদায় ঘোষণা আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাকে আরও গভীর করেছে। এমন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ এবং সহমতের কোনো বিকল্প নেই—না হলে দেশ আবারও এক অনাকাঙ্ক্ষিত সংঘাতের পথে এগিয়ে যাবে।