বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিজিবি) জানিয়েছে, গত কয়েক মাসে ভারত থেকে প্রায় ৭০০ জনের বেশি মানুষ অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করেছেন। এই মানুষগুলো মূলত ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয় ও পশ্চিমবঙ্গ থেকে এসেছে। বেশিরভাগই বাংলাভাষী হলেও তাদের সাথে কোনো ভ্যালিড পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট বা নাগরিকত্ব সংক্রান্ত নথিপত্রছিল না।

এই পরিস্থিতিতে সীমান্তে তৈরি হয়েছে এক বেদনাদায়ক ও জটিল মানবিক সংকট। যেসব মানুষ ঠেলে দেওয়া হচ্ছে তারা মূলত দরিদ্র কৃষক, শ্রমজীবী মানুষ, নারী ও শিশুসহ সাধারণ গ্রামীণ জনগোষ্ঠী। তারা বলছেন, ভারতের স্থানীয় প্রশাসন ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী তাদের জোর করে বাংলাদেশ সীমান্তে নিয়ে আসে এবং পুশব্যাক করে।
বিজিবি সূত্র বলছে,
“প্রতিদিন সীমান্তের কোথাও না কোথাও এক বা একাধিক অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটে। আমরা অনেককে মানবিক বিবেচনায় আটক করে চিকিৎসা ও খাদ্য সহায়তা দিচ্ছি, কিন্তু এটা কোনো দীর্ঘমেয়াদী সমাধান নয়।”
অনেক সময় দেখা যাচ্ছে, পরিবার ভেঙে যাচ্ছে—স্বামী একদিকে, স্ত্রী ও সন্তান অন্যদিকে। শিশুদের চোখে ভয়ের ছায়া, কেউ জানে না তারা কোন দেশে রয়েছে, কোনটা তাদের ভবিষ্যৎ। এ যেন এক নীরব রাষ্ট্রহীনতার আর্তনাদ।
উত্তর-পূর্ব সীমান্তের এক গ্রামে স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান,
“রাতে দেখি কয়েকজন লোক জঙ্গল দিয়ে আমাদের এলাকায় ঢুকছে। তারা ক্লান্ত, ভীত, খাবার চায়। জানায়, ওদের বাড়ি ভারত, কিন্তু সেখান থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে।”
এদের কেউ কেউ বলেন, ভারতের আসামে NRC তালিকায় নাম না থাকায় তারা নাগরিকত্ব হারিয়েছেন। কেউ বলছেন, তারা ভারতের নাগরিক হয়েও কোনো বিচার না করেই তাদেরকে সীমান্তে এনে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এমনও অভিযোগ আছে, যাদের পূর্বপুরুষ ভারতে ৫০ বছর ধরে থেকেছেন, তারাও এখন পরিচয়হীন।
এইসব ঘটনা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। জোর করে সীমান্তে ঠেলে দেওয়াকে আন্তর্জাতিকভাবে “refoulement” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, যা জাতিসংঘের ১৯৫১ সালের শরণার্থী কনভেনশন অনুযায়ী সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
“বাংলাদেশ ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে মন্তব্য করে না। তবে কোনো বাংলাদেশি নয় এমন কাউকে জোরপূর্বক সীমান্তে পাঠানোর প্রচেষ্টা মেনে নেওয়া হবে না।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (BGB)
বাংলাদেশ সরকার পরিস্থিতি মোকাবিলায় যতটা সম্ভব মানবিক আচরণ করছে, কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই দায়ভার ভারতকে নিতে হবে। কারণ বাংলাদেশের ভূমিতে এই মানুষদের অবস্থান কোনোভাবেই বাংলাদেশের দায়িত্ব হতে পারে না। এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একটি অসাধু দৃষ্টান্ত তৈরি করছে।