যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই—শুনতে অবিশ্বাস্য লাগলেও এমন পরিস্থিতির আশঙ্কা জেগেছে বিশ্ব রাজনীতিতে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত এবং আগ্রাসী অবস্থান দেশটিকে ঠেলে দিচ্ছে এক বিপজ্জনক দিকের দিকে, যার পরিণতি হতে পারে ঐতিহাসিক। ২০১৯ সালে ট্রাম্প যখন গ্রীনল্যান্ড কেনার প্রস্তাব দেন, তখন বিশ্বজুড়ে তির্যক হাসি ছিল তার জবাব। কিন্তু দ্বিতীয় মেয়াদে ২০২৫ সালে ক্ষমতায় ফিরে এসে সেই প্রস্তাবকে শুধু পুনর্ব্যক্তই করেননি, বরং সামরিক হস্তক্ষেপের হুমকিও দেন। আর এতেই শুরু হয় এক জটিল আন্তর্জাতিক নাটকের সূচনা।
আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, ডেনমার্কের স্বশাসিত অঞ্চল গ্রীনল্যান্ডে যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা আগ্রাসন বৈধ নয়। তবে ১৯৫১ সালে ডেনমার্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্বাক্ষরিত একটি সামরিক চুক্তির আওতায় আমেরিকা সেখানে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করে এবং নিরাপত্তার দায়িত্ব নেয়। এখন যদি ট্রাম্প সামরিকভাবে গ্রীনল্যান্ড দখলের চেষ্টা করেন, তবে এমন এক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে যেখানে গ্রীনল্যান্ডে মোতায়েন থাকা মার্কিন বাহিনীকে লড়তে হতে পারে নিজের দেশের পাঠানো বাহিনীর বিরুদ্ধেই।
এই দ্বন্দ্ব যদি আরও গভীর হয়, তাহলে ডেনমার্ক ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও নেটোর সদস্য হিসেবে সহযোগিতা চাইতে পারে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রও নেটোর সদস্য। ফলে যদি নেটোর ‘আর্টিকেল ৫’ অনুসারে ডেনমার্ককে রক্ষায় অন্য সদস্যরা এগিয়ে আসে, তাহলে আমেরিকা নিজেই হয়ে উঠবে এই সংঘাতের একদিকে হামলাকারী এবং আরেকদিকে প্রতিরক্ষাকারী। এমন পরিস্থিতি আধুনিক কূটনীতির ইতিহাসে এক নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত হয়ে উঠতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘটনা শুধু ট্রাম্পের খামখেয়ালিপনার ফল নয়, বরং আর্কটিক অঞ্চলের প্রতি বাড়তে থাকা বৈশ্বিক আগ্রহের প্রতিফলন। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বরফ গলছে, উন্মুক্ত হচ্ছে মূল্যবান খনিজ ও শক্তির উৎস এবং নতুন সামুদ্রিক রুট। এই বাস্তবতায় গ্রীনল্যান্ড হয়ে উঠছে পরাশক্তিদের লোভনীয় টার্গেট। আর সেই আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে এখন যুক্তরাষ্ট্র নিজেই দাঁড়িয়ে আছে—নিজের ছায়ার বিপরীতে যুদ্ধের মুখোমুখি হয়ে।