বিশ্বজুড়ে যুদ্ধবিমান নিয়ে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে ভারত-পাকিস্তান সামরিক দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটে। আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে চীনের তৈরি জে-১০ যুদ্ধবিমান, যেটি দিয়েই পাকিস্তান নাকি ভারতীয় রাফায়েল ফাইটার জেট ধ্বংস করেছে বলে দাবি উঠেছে। প্রশ্ন উঠছে—৪০ বছর আগের প্রযুক্তিতে তৈরি একটি যুদ্ধবিমান কীভাবে আধুনিক রাফায়েলকে পরাস্ত করতে পারল?
চীনের ‘ভিগোরাস ড্রাগন’ নামে পরিচিত জে-১০ ফাইটার জেট নির্মাণের উদ্যোগ নেয় চেংদু এয়ারক্রাফট ইন্ডাস্ট্রিয়াল কোম্পানি ১৯৮০-এর দশকে। সিঙ্গেল ইঞ্জিন, সিঙ্গেল সিট এবং মাল্টিরোল ক্ষমতাসম্পন্ন এই জেট প্রথম উড়ে ১৯৯৮ সালে। যদিও যুদ্ধক্ষেত্রে এই বিমান কতটা কার্যকর তা নিয়ে এতদিন পর্যন্ত সন্দেহ ছিল, সম্প্রতি বিমানটির ডিজাইনার জিপিন তার গোপন কৌশলগত বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করলে বিষয়টি নতুন আলোচনার জন্ম দেয়।
জে-১০ এর বিশেষ ‘ক্যানার্ড উইং’ ডিজাইন পাইলটকে দ্রুত দিক পরিবর্তনের সুবিধা দেয় এবং শত্রুপক্ষের হামলা এড়াতে সহায়তা করে। এটি বিমানের স্থিতিশীলতা ও গতিশীলতাও বাড়ায়। সঙ্গে রয়েছে স্টেলথ প্রযুক্তি—যার মাধ্যমে শত্রুর রাডারকে ফাঁকি দিয়ে আকাশে মিশে যেতে পারে বিমানটি। ককপিটে ব্যবহৃত হয়েছে এমন উপাদান, যা রাডারে বিমানের প্রতিচ্ছবি প্রকাশ পেতে বাধা দেয়।
যদিও এটি পুরনো মডেল, জে-১০ তে সংযোজন করা হয়েছে আধুনিক রাডার ও অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত করতে পারে এর উন্নত রাডার, এবং সফলভাবে হামলাও চালাতে সক্ষম। রয়েছে ১১টি এক্সটার্নাল হার্ড পয়েন্ট, যা দূরপাল্লার একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র বহনে সক্ষম করে বিমানটিকে।
চীন এই যুদ্ধবিমানটির বিভিন্ন উন্নত সংস্করণ তৈরি করেছে, যার মধ্যে জে-১০সি সবচেয়ে আধুনিক। ২০২২ সালে পাকিস্তান এই সংস্করণটি তাদের বিমানবাহিনীতে যুক্ত করে। যুদ্ধ বিশ্লেষকদের মতে, সময়োপযোগী আপগ্রেড আর কৌশলগত নকশার কারণে জে-১০ এখনো ভয়ংকর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারে যেকোনো আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে। চার দশক পুরোনো হলেও, এটি প্রমাণ করেছে প্রযুক্তি নয়, কার্যকারিতা ও কৌশলই শেষ কথা বলে।