যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) বাংলাদেশের সাবেক সরকারের ঘনিষ্ঠ দুই ব্যক্তির মালিকানাধীন প্রায় ৯০ মিলিয়ন পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১২০০ কোটি টাকা) মূল্যের বিলাসবহুল সম্পত্তি জব্দ করেছে।
বৃহস্পতিবার (২৩ মে) ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান এ প্রকাশিত এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে জানানো হয়, বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন সম্পদের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যে ক্রমবর্ধমান তদন্তের অংশ হিসেবে এনসিএ লন্ডনের নয়টি সম্পত্তির ওপর ‘ফ্রিজিং অর্ডার’ পেয়েছে।
জব্দকৃত সম্পত্তির মালিক বলে চিহ্নিত হয়েছেন আহমেদ সায়ান রহমান ও তার চাচাতো ভাই আহমেদ শাহরিয়ার রহমান, যারা বাংলাদেশের সাবেক ক্ষমতাধর রাজনীতিক সালমান এফ রহমানের ছেলে ও ভাতিজা। সালমান এফ রহমান ছিলেন শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, লন্ডনের অভিজাত গ্রোসভেনর স্কয়ারে অবস্থিত একাধিক অ্যাপার্টমেন্ট, গ্রেশাম গার্ডেনসের বাড়িসহ প্রায় ৯টি সম্পত্তি রয়েছে তাদের নামে, যেগুলোর কিছু ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডস ও জার্সির মতো অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে মালিকানাধীন।
এনসিএ নিশ্চিত করেছে, সম্পত্তিগুলোর ওপর জব্দাদেশ জারি করা হয়েছে এবং সেগুলো এখন বিক্রি বা হস্তান্তর করা যাবে না।
বিশ্বজুড়ে দুর্নীতিবিরোধী তৎপরতা চালানো সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠদের যুক্তরাজ্যে ৪০০ মিলিয়ন পাউন্ডেরও বেশি সম্পদ রয়েছে বলে তাদের ২০২৪ সালের এক তদন্তে উঠে এসেছে।
এই প্রেক্ষাপটে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ইউকে-এর নীতি পরিচালক ডানকান হেমস বলেন, “আমরা যুক্তরাজ্যের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানাই, তারা যেন তদন্ত অব্যাহত রাখে এবং সব সন্দেহভাজন সম্পত্তি দ্রুত জব্দ করে।”
বিতর্কে শেখ রেহানা ও টিউলিপ সিদ্দিকের নাম
জব্দকৃত এক সম্পত্তিতে একসময় শেখ রেহানা (শেখ হাসিনার বোন) বসবাস করতেন বলে ফিনান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে। এ ছাড়া সাবেক ব্রিটিশ মন্ত্রী ও যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট সদস্য টিউলিপ সিদ্দিক-এর বিরুদ্ধেও অন্তর্বর্তী বাংলাদেশ সরকার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। তবে টিউলিপ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এর জেরে মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন।
রহমান পরিবারের প্রতিক্রিয়া
আহমেদ সায়ান রহমানের এক মুখপাত্র ফিনান্সিয়াল টাইমস-কে বলেন, “আমাদের মক্কেল কোনো অনিয়মের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করছেন। তিনি যুক্তরাজ্যের যেকোনো তদন্তে অবশ্যই সহযোগিতা করবেন।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশে বর্তমানে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে, যেখানে শত শত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হচ্ছে। আমরা আশা করি যুক্তরাজ্যের কর্তৃপক্ষ এসব বিষয় বিবেচনায় নেবে।”
এ বিষয়ে রহমান পরিবারের আইনজীবী এবং বেক্সিমকোর পক্ষ থেকেও দ্য গার্ডিয়ান-এর অনুসন্ধানের প্রেক্ষিতে যোগাযোগ করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।