হাবিব আহমেদ, রাজশাহী:
দেড় বছর আগে নির্মাণ শেষ হওয়ার পরও চালু হয়নি রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী সাধারণ গ্রন্থাগার। প্রায় ৩ কোটি টাকায় নির্মিত এ স্থাপনা আজও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে, যা নিয়ে শহরের সচেতন মহলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। অর্থ সংকটের কারণে গ্রন্থাগারের অডিটোরিয়ামসহ পরিকল্পিত স্থাপনাগুলো নির্মাণই হয়নি বলে জানিয়েছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক)।
রাজশাহীর মিয়াপাড়ায় অবস্থিত এ গ্রন্থাগারটির পুনঃনির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয় ২০১৬ সালে। পরে ২০১৮ সালে পুরনো ভবন ভেঙে ফেলে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয় নির্মাণ কাজ, যা শেষ হয় ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে। এরপর রাসিক জেলা প্রশাসকের কাছে এটি হস্তান্তর করলেও আজও শুরু হয়নি এর কার্যক্রম।
গ্রন্থাগারের পরিকল্পনায় আধুনিক মানের একটি ৩০০ আসনের অডিটোরিয়াম থাকার কথা থাকলেও অর্থাভাবে তা বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে একদিকে যেমন নষ্ট হয়েছে সম্ভাব্য আয়ের উৎস, তেমনি আটকে গেছে স্থানীয় সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রও।
রাসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী (পরিকল্পনা) সুব্রত কুমার সরকার জানান,
“সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় লাইব্রেরি ভবনের আংশিক নির্মাণই সম্ভব হয়েছে। টাকার সংকটে নকশায় থাকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা বাদ দিতে হয়েছে।”
জেলা প্রশাসকের কাছে হস্তান্তরের পরও কেন চালু হয়নি এর কার্যক্রম—এ বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গ্রন্থাগার কমিটির সভাপতি গোলাম মাওলার অনুপস্থিতি ও কার্যকর পদক্ষেপহীনতাকেও দায়ী করছেন স্থানীয়রা।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক আফিয়া আকতার জানান,
“আমরা বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখছি। খুব শিগগিরই সাধারণ গ্রন্থাগারটির কার্যক্রম শুরু হবে।”
রাজশাহীর এই গ্রন্থাগারের ঐতিহাসিক গুরুত্বও কম নয়। ১৮৬৬ সালে রাজা আনন্দনাথের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এ গ্রন্থাগারটি ১৮৮৪ সালে রাজা প্রমথনাথের অনুদানে বর্তমান মিয়াপাড়ায় দ্বিতল ভবনে রূপ নেয়। কাসিমপুরের জমিদার কেদার প্রসন্ন লাহিড়ীর অনুদানে নির্মিত ভবনের মিলনায়তনটির নাম রাখা হয় ‘গিরিশ চন্দ্র হল’।
এই গ্রন্থাগারেই ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্বহস্তে স্বাক্ষরিত ২৯টি বই, আর এখানে পা রেখেছেন মহাত্মা গান্ধী, সরোজিনী নাইডু, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, শরৎচন্দ্র বোস, সুভাষচন্দ্র বসু, আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়সহ বহু মনীষা।
সচেতন নাগরিকদের দাবি,
“এই ঐতিহাসিক গ্রন্থাগার চালু করতে বিলম্ব কোনোভাবেই কাম্য নয়। এটি শুধু একটি লাইব্রেরি নয়, এটি রাজশাহীর সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের অংশ।”