আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সবধরনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এগিয়ে নেওয়ার ওপর জোর দিয়েছে। রাজধানীর বিজয়নগরে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, বাংলাদেশ যেন কোনো আন্তর্জাতিক পরাশক্তির ছায়াযুদ্ধে পরিণত না হয়, এ বিষয়ে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থানরত পনের লক্ষাধিক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে তাদের নিজ দেশে নিরাপত্তা ও সম্মানের সাথে ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ঐকমত্য গড়ে তোলা জরুরি।
সংবাদ সম্মেলনে এবি পার্টির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক প্রফেসর ডা. মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত টুটুল, আলতাফ হোসাইন, সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ নোমান এবং ছাত্রপক্ষের আহ্বায়ক মোহাম্মদ প্রিন্সসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
চট্টগ্রাম বন্দর এবং তথাকথিত ‘মানবিক করিডোর’ বিষয়ে দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করে ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, বিদেশি ব্যবস্থাপনার প্রতি যে নেতিবাচক মনোভাব অনেক সময় দেখা যায়, তা সবসময় বাস্তবসম্মত নয়। যদি চুক্তি স্বচ্ছ, জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় সুনির্দিষ্ট এবং কার্যকর তদারকির আওতায় হয়, তবে বিদেশি ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশের উন্নয়নের গতিকে ত্বরান্বিত করতে পারে। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরকে আন্তর্জাতিক লজিস্টিক হাবে রূপান্তরের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সময় ব্যবস্থাপনা, প্রযুক্তি, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং জবাবদিহিতা—এই চারটি বিষয়ের গুরুত্ব অপরিসীম।
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের পোশাক শিল্প ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হোটেল ব্যবস্থাপনা বহু আগেই বিদেশি অংশীদারিত্বে গড়ে উঠেছে। Radisson, InterContinental, Marriott কিংবা Le Méridien-এর মতো হোটেলগুলো আন্তর্জাতিক মানের সেবা নিশ্চিত করে দেশের পর্যটন ও অর্থনীতিতে অবদান রাখছে, অথচ এতে কোনোভাবেই দেশের সার্বভৌমত্ব ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। ঠিক তেমনি, চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়নে যদি বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠান যুক্ত হয়, তবে তা দেশের অর্থনীতিকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিতে পারে।
এবি পার্টি চারটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (BIDA) প্রতি আহ্বান জানায়:
১. বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির পূর্বে তাদের অতীত ইতিহাস, দক্ষতা ও চুক্তির শর্তাবলী, যতটুকু সম্ভব, জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে।
২. বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও কৌশলগত স্বার্থ যেন কোনোভাবেই আপসের শিকার না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
৩. স্থানীয় জনশক্তি, শ্রমিকদের অধিকার এবং অর্থনৈতিক লাভ নিশ্চিত করতে হবে।
৪. পুরো প্রক্রিয়া হতে হবে স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক এবং জনস্বার্থের প্রতি দায়বদ্ধ।
চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়ন প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, এটি যদি স্বচ্ছতা ও দেশপ্রেমের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়, তবে এই উদ্যোগ আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার ‘পরবর্তী সিঙ্গাপুর’-এ রূপান্তরের ভিত্তিপ্রস্তর হতে পারে।
রোহিঙ্গা সংকট এবং ‘মানবিক করিডোর’ প্রসঙ্গে এবি পার্টির অবস্থান তুলে ধরে ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, বাস্তবে রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৭ থেকে ২০ লাখে পৌঁছেছে এবং তারা মানবেতর জীবনযাপন করছে। এই প্রেক্ষাপটে ‘মানবিক করিডোর’ স্থাপনের যে প্রস্তাব এসেছে, তা জাতীয় নিরাপত্তা, কূটনৈতিক ভারসাম্য এবং ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকির দিক থেকে গভীরভাবে মূল্যায়নযোগ্য। তিনি বলেন, যদিও সরকার বিলম্বে হলেও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমানের বক্তব্যের মাধ্যমে অবস্থান পরিষ্কার করেছে, তবুও এই বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, রাখাইন রাজ্য এখনো রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ নয়। সেখানে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী রোহিঙ্গারা এখনো সহিংসতা, বৈষম্য ও নাগরিক অধিকারহীনতার মধ্যে রয়েছে। এই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে কোনো ‘মানবিক করিডোর’ প্রতিষ্ঠা হলে, তা দেশকে অনিচ্ছাকৃতভাবে একটি ভূরাজনৈতিক সংঘাতের কেন্দ্রে নিয়ে যেতে পারে। এবি পার্টি মনে করে, এটি কোনো রাজনৈতিক দলের স্বার্থের নয়, বরং এটি জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন। তাই এ বিষয়ে দলমত নির্বিশেষে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এবি পার্টির মতে, একমাত্র গ্রহণযোগ্য সমাধান হলো রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, টেকসই ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসন।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের ভূখণ্ড, সার্বভৌমত্ব, জাতীয় নিরাপত্তা ও আত্মমর্যাদার প্রশ্নে কোনো বিদেশি চাপ, আন্তঃরাষ্ট্রীয় খেলা কিংবা কৌশলগত চালচিত্র বরদাশত করা হবে না। এবি পার্টি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে রোহিঙ্গাদের প্রতি সহানুভূতি জানালেও, সমাধান হতে হবে বাস্তবমুখী ও সাহসিকতার ভিত্তিতে, যার নেতৃত্ব থাকবে বাংলাদেশের হাতে এবং যার মূলভিত্তি হবে দেশের জনগণের স্বার্থরক্ষা।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সেলিম খান, আন্তর্জাতিক বিভাগের সদস্য হাজরা মাহজাবিন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এনামুল হক, আমেনা বেগম, রাশেদা আক্তার মিতু, সহকারী অর্থ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক, সহকারী দপ্তর সম্পাদক মশিউর রহমান মিলু, অ্যাডভোকেট শরণ চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রব জামিলসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।