সত্যজিৎ দাস, সিলেট:
সিলেটের হৃদরোগ চিকিৎসায় নতুন এক দিগন্তের সূচনা হলো। প্রথমবারের মতো মাউন্ট এডোরা হসপিটাল, আখালিয়ায় সফলভাবে একটি আধুনিক হার্ট ডিভাইস CRT-D (Cardiac Resynchronization Therapy with Defibrillator) প্রতিস্থাপন করা হয়েছে এক ৮০ বছর বয়সী বৃদ্ধার শরীরে। মঙ্গলবার (২১ মে ২০২৫) সকাল ১০টায় অত্যাধুনিক এই হার্ট ইমপ্লান্ট কার্যক্রমটি সম্পন্ন হয়।
রোগীটি দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্ট ও অনিয়মিত হৃদস্পন্দনে ভুগছিলেন। অধ্যাপক ডা. কে এম আখতারুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে ভর্তি হওয়ার পর পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তার Dilated Cardiomyopathy (DCM) রোগ শনাক্ত হয়। প্রাথমিক চিকিৎসায় উন্নতি না হওয়ায় চিকিৎসক ও পরিবারের সম্মতিতে CRT-D ডিভাইস প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এই জটিল হার্ট ইমপ্লান্ট প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করেন দেশের খ্যাতনামা অ্যারিদমিয়া বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এম আতাহার আলী। তার সঙ্গে ছিলেন মাউন্ট এডোরা ক্যাথল্যাবের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ শাহাবুদ্দীন, ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট ডা. আজিজুর রহমান রোমান, ডা. অজয় কুমার দত্ত এবং ইন-হাউজ অ্যানেস্থেসিয়োলজিস্ট ডা. রায়হান আহমেদ।
চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে জানা যায়, ইমপ্লান্ট সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার পর রোগীর অবস্থা এখন স্থিতিশীল এবং আগের তুলনায় অনেক ভালো আছেন।
হাসপাতালের মেডিকেল সার্ভিসেস পরিচালক ডা. সৈয়দ মাহমুদ হাসান বলেন,
“এই সাফল্যের মাধ্যমে প্রমাণিত হলো—আন্তর্জাতিক মানের কার্ডিয়াক ইন্টারভেনশন সেবা এখন সিলেটেই পাওয়া যাচ্ছে। এটি পুরো অঞ্চলের হৃদরোগীদের জন্য এক বিশাল অগ্রগতি।”
CRT-D কী এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?
CRT-D একটি যুগান্তকারী হৃদরোগ চিকিৎসা প্রযুক্তি যা দুইটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে:
- Cardiac Resynchronization Therapy (CRT): এটি হার্টের পাম্পিং ছন্দ ঠিক করে, যা হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। এটি মূলত হার্ট ফেইলিউর রোগীদের জন্য ব্যবহৃত হয়।
- Implantable Cardioverter Defibrillator (ICD): অনিয়মিত বা হঠাৎ থেমে যাওয়া হার্টবিটের ক্ষেত্রে এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক করে।
এই ডিভাইস হৃদপিণ্ডের মারাত্মক ছন্দপতনের ঝুঁকি কমায় এবং জীবন রক্ষায় তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সিলেট অঞ্চলে হার্ট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা সেবার প্রসার এবং উন্নত কার্ডিয়াক সুবিধা সুলভ করার একটি বড় দৃষ্টান্ত তৈরি হলো। সংবাদটি চিকিৎসাবিদ্যা, প্রযুক্তি এবং আঞ্চলিক স্বাস্থ্যসেবার অগ্রগতির দিক থেকে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।