সত্যজিৎ দাস (মৌলভীবাজার প্রতিনিধি):
শহরের প্রতিটি অলিতে-গলিতে আজ যেন নিঃশব্দ হাহাকার—একজন মানুষের শূন্যতায়। তিনি ছিলেন একজন ব্যবসায়ী, সমাজসেবক, সংস্কৃতির ধারক—তাঁর নাম গোপেন্দ্র কুমার দাশ। গত ১৭ মে ভোর ৪টায়,ঢাকাস্থ বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়,তিনি জীবনের সকল দায় শেষ করে পাড়ি জমান অনন্তলোকের পথে। বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ।
জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত তিনি লড়েছেন হার্ট, ডায়াবেটিস,কিডনি জটিলতা,রক্তশূন্যতা ও বার্ধক্যজনিত নানা রোগের বিরুদ্ধে। তবুও মানুষটির মুখে কখনও ক্লান্তি ছিল না;ছিল শুধুই দায়িত্ববোধ,মানুষের প্রতি প্রেম।
শ্রীমঙ্গলের ভিক্টোরিয়া সিনেমা হল,ভানুগাছ চিত্রকথা,আখাউড়া অনুরাধা সিনেমা হল-শুধু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নয়,ছিল শহরের সামাজিক মিলনস্থল। এই হলগুলোর প্রবর্তক ছিলেন তিনি। গ্রিন লিফ গেস্ট হাউজ-এর মতো অভিজাত আতিথেয়তার পথিকৃৎও তিনি।
তাঁর একমাত্র পুত্র এস.কে. দাস সুমন,একজন পেশাদার সাংবাদিক,যিনি দৈনিক কালবেলা ও প্রতিদিনের মৌলভীবাজার-এর শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি।
তিনি ছিলেন শ্রী শ্রী জগন্নাথদেবের আখড়ার সহসভাপতি,শ্রীমঙ্গলেশ্বরী কালীবাড়ির সাধারণ সম্পাদক,বারোয়ারী কালীবাড়ির সভাপতি এবং ডাকবাংলো পূজা উদযাপন কমিটির কর্ণধার।
শ্রীমঙ্গলের ধর্মীয়,সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তাঁর ছাপ আজও দৃশ্যমান,স্থায়ী,অবিনশ্বর।
তিনি বিশ্বাস করতেন-“মানুষের পাশে থাকা মানেই ঈশ্বরের সেবা করা।”
গোপেন্দ্র বাবুর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই শহরের আকাশজুড়ে যেন নেমে আসে বিষাদের ঘন মেঘ।
তাঁর মরদেহ শোভাযাত্রার মতো করে নিয়ে যাওয়া হয় জগন্নাথ আখড়া,বারোয়ারী কালীবাড়ি ও শ্রীমঙ্গলেশ্বরী কালীবাড়িতে। ফুল,তোরণ আর চোখের জলে তাঁকে শ্রদ্ধা জানায় শহরের শত শত মানুষ।
শেষ প্রার্থনা হয় বড়গাঁও শচীমাতা স্মৃতি তীর্থ আনন্দ ধামে,আর তারপর সনাতন রীতিতে পৌর শ্মশানঘাটে সম্পন্ন হয় অন্তিম ক্রিয়া।
এক পুত্র,পাঁচ কন্যা,দুই পুত্রবধূ,নাতি-নাতনি এবং অগণিত শুভানুধ্যায়ী রেখে গেছেন তিনি। কিন্তু তাঁর সবচাইতে বড় রেখে যাওয়া উত্তরাধিকার হলো; নিষ্ঠা,দানশীলতা এবং মানবপ্রেমে গড়া একটি জীবনচরিত।
গোপেন্দ্র কুমার দাশ-এর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার-৪) আসনের সাবেক এমপি প্রার্থী আনহারুজ মুজিবুর রহমান চৌধুরী (হাজী মুজিব)।
তিনি এক শোকবার্তায় বলেন,“তাঁর এই মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত ও মর্মাহত। তিনি শ্রীমঙ্গলবাসীর একজন নির্ভরযোগ্য ব্যবসায়ী, বর্ষিয়ান ও ধর্মপ্রাণ সমাজসেবক ছিলেন।”
তিনি আরও বলেন,“আমি তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি জানাই গভীর সমবেদনা।”