মোঃ রাহাদ আলী সরকার, মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি প্রতিনিধি:
দেশের ব্লু ইকোনমি (নীল অর্থনীতি) বাস্তবায়নের লক্ষ্য সামনে রেখে ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় দেশের প্রথম মেরিটাইম বিষয়ক সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়—বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি (BMU)। প্রতিষ্ঠার পর এক দশক পেরিয়ে গেলেও এখনো বেশ কিছু কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি। তার মধ্যে আবাসন সংকট অন্যতম।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অনার্স ও মাস্টার্স প্রোগ্রামে ১ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন, যাদের অধিকাংশই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসে পড়াশোনা করছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্ব থাকার পরেও শিক্ষার্থীদের অনেকেই নিরাপত্তাহীনতা, উচ্চ ভাড়া এবং পরিবেশগত সমস্যার কারণে ক্যাম্পাসের বাইরে বাসা বা মেসে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন।
স্থায়ী ক্যাম্পাস নেই, অস্থায়ী ভবনে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম
এক দশক পেরিয়ে গেলেও এখনো বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ সম্পূর্ণ হয়নি। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি দুইটি ভবনে অস্থায়ীভাবে শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে। মিরপুর ডিওএইচএস এলাকায় শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ আছে ছেলেদের ২টি ও মেয়েদের ১টি হল, যার মোট ধারণক্ষমতা প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থী।
অন্যদিকে, বর্তমানে BMU-তে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১,০০০+ হওয়ায় ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থীই আবাসন সুবিধার বাইরে রয়েছেন। ফলে শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশকে বহির্বিশ্ববিদ্যালয় বাসায় উচ্চ ভাড়ায় বসবাস করতে হচ্ছে।
ইউজিসি রিপোর্টেও উঠে এসেছে সংকটের চিত্র
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (UGC) সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে গড়ে ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত। বিশেষভাবে কম সুবিধাভোগী বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় রয়েছে মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির নামও, যেখানে মাত্র ২০ শতাংশ শিক্ষার্থী হল সুবিধা পান।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ও আন্দোলন
শিক্ষার্থীরা বলছেন, “হলে থাকা শিক্ষার্থীদেরকেও প্রতিমাসে প্রায় ২ হাজার টাকা সিট ভাড়া দিতে হয়, সাথে যুক্ত হয় মিল খরচ, যা অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তুলনায় ব্যতিক্রম।”
তারা আরও অভিযোগ করেন, “আমরা বারবার হল সংখ্যা বৃদ্ধি ও সিট বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলন করলেও প্রশাসন ও ইউজিসি শুধু আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে। কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই।”
প্রশাসনের আশ্বাস
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, স্থায়ী ক্যাম্পাসের নির্মাণ কাজ শেষ হলে ছাত্রদের জন্য ৬ তলা বিশিষ্ট হলে ৫২০ জন এবং ছাত্রীদের জন্য ৬ তলা হলে ৩৬০ জন শিক্ষার্থী আবাসন সুবিধা পাবেন। এতে করে কিছুটা হলেও সংকট লাঘব হবে বলে আশা করছেন তারা।
ইউজিসির প্রতিক্রিয়া
এ বিষয়ে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ বলেন, “আমরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমস্যা সম্পর্কে অবগত। বাজেট বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের কাজ চলছে। আবাসন সংকট সমাধানে আমরা আমাদের অবস্থান থেকে যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।”
বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সির মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলা আবাসন সংকট শুধু শিক্ষার্থীদের জীবনযাত্রায় প্রভাব ফেলছে না, বরং তাদের শিক্ষাজীবনেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে এই সংকট আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা শিক্ষার্থীদের।