শাহজাহান আলী মনন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি:
নীলফামারীর সৈয়দপুরে একটি ইটভাটার পানিভর্তি খাল থেকে ৬ বছর বয়সী এক শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত শিশুটির নাম মিজানুর রহমান মিজান। সোমবার (১৯ মে) দুপুর ৩টার দিকে উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের বানিয়াপাড়া এলাকায় এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।
শিশু মিজান স্থানীয় বাসিন্দা ও ঢাকায় কর্মরত গার্মেন্টস কর্মী মো. আনোয়ারা হোসেনের একমাত্র সন্তান।
পরিবারের সদস্যরা জানান, দুপুর ১টার পর থেকেই মিজানকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীদের বাসা থেকে শুরু করে পুরো এলাকা চষে ফেলা হয়। এমনকি মাইকিং করেও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরে স্থানীয়দের পরামর্শে বাড়ির পাশের এএনবি-২ ইটভাটার খালে খোঁজ শুরু করে পরিবার। এক ঘণ্টারও বেশি সময় পর খালের পানির নিচ থেকে উদ্ধার করা হয় মিজানের নিথর দেহ। সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
স্থানীয়রা জানান, মিজান তার মায়ের সঙ্গে ওই ভাটার এলাকায় এসেছিল। মায়ের অজান্তেই সে খেলতে খেলতে খালের দিকে চলে যায় এবং সেখানে পানিতে পড়ে যায় বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এনবি-২ ইটভাটাসহ আশপাশের প্রায় ২২টি ইটভাটায় ইট তৈরির জন্য মাটি কাটতে গিয়ে গর্ত তৈরি করা হয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই এসব গর্তে পানি জমে যায় এবং পরিণত হয় প্রাণঘাতী ফাঁদে।
ঘটনার পর এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ভাটার মালিককে বহুবার অনুরোধ করা হয়েছিল যেন পাড়া-মহল্লার পাশের জমিতে মাটি না কাটেন, কিংবা কাটলেও যেন তা বেশি গভীর না হয়। কিন্তু মালিক নাজমুল হোসেন কারও কথা শোনেননি।
এ বিষয়ে ভাটা মালিক হাজী নাজমুল হোসেন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন,
“হায়াত ফুড়ে গেছে তাই মারা গেছে। এতে আমার কি দোষ বা আমার করারই বা কি আছে?”
তার এ ধরনের মন্তব্যে জনমনে আরও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
স্থানীয়রা বলেন, এর আগেও তার কারখানায় এক যুবক বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গিয়েছিল। তখনও তিনি টাকার জোরে কোনো শাস্তি ছাড়াই পার পেয়ে গেছেন। এ ঘটনার পরও তিনি কোনও সহানুভূতি বা দায়িত্ববোধ প্রকাশ না করে নির্লিপ্ত আচরণ করছেন।
এ বিষয়ে কামারপুকুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন সরকার শিশুটির মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তবে সৈয়দপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফইম উদ্দীন বলেন,
“ঘটনাটি সম্পর্কে কেউ আমাকে জানায়নি। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এলাকাবাসী প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছেন, অনিয়ন্ত্রিতভাবে মাটি কাটার ফলে তৈরি হওয়া প্রাণঘাতী গর্তগুলোতে যেন দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়, যাতে আর কোনো শিশুর প্রাণ না ঝরে পড়ে অবহেলার দায়ে।