আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার পর ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ বাস্তবায়নের দাবিতে সক্রিয় হয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির শীর্ষ নেতারা বলছেন, ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের নির্ধারিত সময়সীমা—৩০ কর্মদিবস—অবশ্যই মানা উচিত। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধনের শর্ত পূরণ করাও এখন এনসিপির অন্যতম অগ্রাধিকার।
গত ৮ মে ঢাকায় অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে হওয়া গণ–অভ্যুত্থান থেকে আওয়ামী লীগবিরোধী আন্দোলনের মূল সূচনা করে এনসিপি। বিশেষত দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর নেতৃত্বে শুরু হওয়া এই আন্দোলনে পরে দলের আহ্বায়ক, সদস্যসচিবসহ শীর্ষ নেতারা যুক্ত হন। ওইদিন রাতেই ইসলামপন্থী বিভিন্ন দলের সমর্থনেও বড় জোট তৈরি হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ১০ মে অন্তর্বর্তী সরকারের বৈঠকে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ এবং ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব জানিয়েছেন, “এই ঘোষণাপত্রের মধ্য দিয়েই দেশের ভবিষ্যৎ দিক নির্ধারিত হবে। তাই নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই এটি প্রকাশ হওয়া জরুরি।”
আপাতত বড় কোনো আন্দোলনের কর্মসূচি না থাকলেও দলীয় সংগঠন বিস্তারে জোর দিয়েছে এনসিপি। ইতোমধ্যে তারা ইসির নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শুরু করেছে। দেশের ২২টি জেলা ও ১০০টি উপজেলায় দলীয় কার্যালয় স্থাপন এবং জেলা-উপজেলা কমিটি গঠনের কাজ চলছে পুরোদমে। এজন্য উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলভিত্তিক দুটি সাংগঠনিক টিম কাজ করছে—দক্ষিণে হাসনাত আবদুল্লাহ এবং উত্তরে সারজিস আলমের নেতৃত্বে।
দলটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন জানান, “আমরা দেশব্যাপী জেলা ও উপজেলা কমিটি গঠনের কাজ শুরু করেছি। সংগঠনকে কয়েকটি অঞ্চলে ভাগ করে আমাদের নেতারা সফরে বের হয়েছেন। আমরা আশাবাদী, দ্রুতই নিবন্ধনের শর্ত পূরণ করতে পারবো।”
রাজনৈতিক কাঠামো সুসংগঠিত করতে এনসিপি ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি ইউনিট ও কমিটি গঠন করেছে। ১৬ মে আত্মপ্রকাশ করেছে তাদের যুব সংগঠন ‘জাতীয় যুবশক্তি’। শিগগিরই আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে ‘জাতীয় নারী শক্তি’ ও ‘জাতীয় শ্রমিক শক্তি’। দলীয় শৃঙ্খলা ও লিয়াজোঁ কমিটিও গঠিত হয়েছে।
এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয় বর্তমানে ঢাকার বাংলামোটরে রূপায়ণ ট্রেড সেন্টারে অবস্থিত। তবে একটি স্থায়ী কার্যালয়ের জন্য ভবন অনুসন্ধান চলছে। এ ছাড়া গত ২৭ এপ্রিল ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠনের মাধ্যমে গঠনতন্ত্র তৈরির কাজ এগিয়ে চলছে।
দ্রুততম সময়ে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে মাঠে একটি শক্তিশালী অবস্থান গড়াই এখন এনসিপির লক্ষ্য বলে জানিয়েছে দলীয় সূত্র।