মো. জিসান রহমান, মাভাবিপ্রবি প্রতিনিধি:
টাঙ্গাইলের সন্তোষে সবুজ প্রকৃতির কোলে অবস্থিত মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (মাভাবিপ্রবি) বর্ষার দিনে যেন পায় এক নতুন জীবন। বছরের অন্য সময়ের তুলনায় এ সময় ক্যাম্পাসের রূপ হয়ে ওঠে আরও মোহনীয়, আরও আবেগঘন। গাঢ় মেঘে ঢাকা আকাশ, টুপটাপ বৃষ্টি আর হিমেল বাতাস মিলিয়ে ক্যাম্পাসজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এক অনন্য স্নিগ্ধতা।
বৃষ্টির প্রথম ফোঁটাতেই প্রাণ ফিরে পায় হতাশা চত্বর, হাতির কবর, হল চত্বর, প্রত্যয় ‘৭১, বিজয় অঙ্গন, কৃষ্ণচূড়া লেন কিংবা গ্রন্থাগার চত্বর। ধুয়ে যাওয়া গাছের পাতা, ভেজা লাল ইটের ভবন আর জলে ঝলমল পথ যেন হয়ে ওঠে প্রকৃতির রঙতুলিতে আঁকা এক জীবন্ত চিত্রকর্ম।
শিক্ষার্থীদের চোখে, এই সময় ক্যাম্পাস যেন এক প্রেমিকের হাতে গড়া কবিতা—যেখানে প্রতিটি ধারা বলে চলে ভালোবাসার কথা। কেউ ছাতা হাতে ক্লাসে ছুটে যান, কেউ বা ইচ্ছা করেই বৃষ্টিতে ভিজে খোঁজেন অন্যরকম অনুভব। হাঁটার পথে কেউ নিজের সঙ্গে কথা বলেন, কেউ ভাগ করে নেন ছোট্ট এক ছাতার নিচে প্রিয় কারো সঙ্গে সময়ের নরম ছোঁয়া।
রানীপুকুরের ঘাটলায় বসে থাকা হোক বা কৃষ্ণচূড়ার ছায়ায় দাঁড়িয়ে থাকা—প্রতিটি শিক্ষার্থীর চোখেমুখে থাকে প্রশান্তির রেখা। কেউ ছুটে যান মাঠে, মেতে ওঠেন ভেজা ঘাসে ফুটবল খেলায়। আর মধুখালার সেই প্রিয় টং-এর চা? এক কাপ চায়ের পাশে জমে ওঠে শত গল্প—ভালোবাসা, স্বপ্ন, হঠাৎ অভিমান কিংবা নিরব আত্মবিশ্লেষণ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ধরা পড়ে মাভাবিপ্রবির এই রূপ। ক্যামেরা কাঁধে বেরিয়ে পড়েন অনেকেই—কেউ প্রকৃতি ফ্রেমবন্দি করেন, কেউ আবার মুহূর্ত ভাগ করেন ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে। প্রাক্তন শিক্ষার্থীরাও ছবির নিচে মন্তব্যে জানান, কতটা মিস করছেন এই বৃষ্টিভেজা দিনগুলো।
রবীন্দ্রনাথ যেমন বলেছিলেন—
“আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদরদিনে…”
তেমনি বৃষ্টির দিনে মাভাবিপ্রবি হয়ে ওঠে ছন্দময় এক জীবনগাঁথা। এখানে মিশে যায় রোমান্স, বন্ধুত্ব, স্বপ্ন আর প্রকৃতির অপার মমতা। ক্লান্তি ধুয়ে যায়, জেগে ওঠে নতুন স্বপ্ন। এ যেন তরুণ প্রাণের এক রঙিন স্বপ্নলোক—যার প্রতিটি ফোঁটা বৃষ্টি বলে যায় অমলিন অনুভূতির গল্প।