জসিম উদ্দিন,নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি :
প্রকৃতি যেন এক অনন্ত প্রেমিক। প্রতিটি ঋতু, প্রতিটি মাসে সে রঙ ছড়িয়ে দেয় জীবনের প্রতিটি কোণে। বৈশাখের শেষপ্রান্তে, যখন গ্রীষ্মের খরতাপ চারদিকে একরকম ক্লান্তির ছায়া ফেলে, তখনই নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠজুড়ে দেখা মেলে এক অদ্ভুত সৌন্দর্যের—উলু বনের তুলার শুভ্র মায়া।
শিক্ষার্থীদের কাছে এটি কাশফুল বলে ভুল হওয়ার মতোই নয়নাভিরাম। তবে প্রকৃতিতে শরতের আগে এই তুলা নয়, এটি উলু ঘাসের বীজ—Cotton Grass। তপ্ত দুপুরে যখন সূর্যের খর রশ্মি ক্লান্তি এনে দেয়, তখন সাদা তুলার মৃদু দোল চোখে এনে দেয় শীতলতা, মনে জাগায় প্রশান্তি।
বিকেলে হাঁটতে আসা শিক্ষার্থীরা পাশ দিয়ে হাঁটার সময় উলু বনের তুলা আলতো করে ছুঁয়ে যায়। যেন এক নীরব প্রেমালাপ। তুলাগুলোও তাদের শরীরে মেখে দেয় শুভ্রতার স্পর্শ। কারও মনে প্রেম, কারও মনে কবিতা—তবে সবার মনেই জেগে ওঠে এক গভীর প্রশান্তি।
শুধু প্রেমিকই নয়, ব্যর্থ প্রেমিকও এই তুলায় খুঁজে পায় সান্ত্বনা। রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা সাদা তুলা তাকে শেখায়—চুপচাপ ভালোবাসাও এক ধরণের শক্তি, এক ধরণের ভাষা। প্রেম না পেলেও প্রেম দেওয়া যায়।
বন্ধুরা দলবেঁধে আসে, তুলার মাঝে ছবি তোলে, আড্ডা জমায়। তুলা হয়ে ওঠে তাদের হাসি, স্মৃতি আর ইনস্টাগ্রামের পোস্ট। কেউ বলে, “তুমি উলুর তুলার চেয়েও নরম, শুভ্র, স্নিগ্ধ।”
আর যখন বাতাসে বৃষ্টির ঘ্রাণ ভেসে আসে, তখন উলু তুলা দুলতে দুলতে সুর তোলে, যেন সমুদ্রের ঢেউ। সে ঢেউয়ে ভেসে যায় ক্লান্তি, বিষাদ, এমনকি হারানো প্রেমও। প্রেমিক কবিতা শোনায়, আর একাকী প্রেমিক উলুর হাওয়ায় উড়িয়ে দেয় কল্পনার চিঠি।
সন্ধ্যার আলো-আঁধারিতে যখন তুলার উপর পড়ে চাঁদের আলো, মনে হয়—সমস্ত জগতের ক্লান্তিকে বিদায় জানিয়ে এখানে এসে ঘুমিয়ে পড়া যায়, হারিয়ে যাওয়া যায় এক অনন্ত শান্তির কোলে।
এ তো নিছক ঘাস নয়—এ যেন প্রেম, ধৈর্য, প্রতীক্ষা আর সৌন্দর্যের এক নীরব ব্যাখ্যা।