মুহাম্মদ আল্-হেলাল
যতদূর মনে পড়ে ২০১২ সালের কথা। ময়মনসিংহ অঞ্চলের তৎকালীন সর্ববৃহৎ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে উপবিষ্ট ছিলাম। এমন সময় একজন সহকারী শিক্ষক এসে প্রধান শিক্ষককে বললেন টাকা গুলো ভাগ করে দিচ্ছেন না কেন? প্রধান শিক্ষক বললেন অন্যান্য টিচাররা বলেছেন ২ লাখ টাকা না দিলে যেন আমরা ভাগাভাগি না করি।
আমি তখন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরাধীন সেকায়েপ প্রকল্পে কৌশলগত প্রশিক্ষক হিসাবে কর্মরত ছিলাম। পেশাগত কাজেই আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। জানতে চাইলাম কিসের টাকা। যদিও সেটি আমার কার্যতালিকার অন্তর্ভুক্ত নয়। প্রধান শিক্ষক বা কোন এক শিক্ষক তখন বললেন একটি নোট গাইড কোম্পানি এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়েছে তাদের নোট গাইড যেন আমরা বিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করি এবং শিক্ষার্থীদের ঐ কোম্পানির নোট গাইড কিনতে বাধ্য করি।
এর মধ্যে ঐ বিদ্যালয়ের ক্লিন ইমেজ খ্যাত একজন শিক্ষক বললেন ২ লক্ষ টাকা দিলে আমরা ঐ কোম্পানির নোট গাইড ভুল থাকুক বা যাই থাকুক পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করব। না হলে আমরা তাদের এই এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা ফিরিয়ে দিয়ে সত্যিকারের ভালো নোট গাইড পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করব। এই বিষয়ে আলোচনা এখানেই শেষ হয়েছিল।
আমার কৌতুহলী মন তাই বেশ কিছুদিন পর আবার বিষয়টি জানতে চাই। পরবর্তীতে জানতে পারি ঐ এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকার বিনিময়েই ঐ কোম্পানির নোট গাইড পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
এখন টিচারদের মূল দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের দিয়ে ঐ কোম্পানির নোট গাইড ক্রয় করানো। এক্ষেত্রে বিদ্যালয়ে যারা রাগী এবং মারামারির টিচার হিসাবে পরিচিত তাদের সফলতা বেশি।
টিচারদের তখন কার্যতালিকার মধ্যে আরো দায়িত্ব হয়ে পড়ে সরকার প্রদত্ত বই বাদ দিয়ে ঐ কোম্পানির দেওয়া সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ নোট গাইড থেকে থেকে বেশি করে মুখস্থ পড়া দেওয়া আর ঐ নোট গাইডটি ধরে ধরে শিক্ষার্থীদের পড়া ধরা। একটি শব্দ ভুল হলেই শিক্ষার্থীদের শুরু হয় নিষিদ্ধ অমানবিক শারীরিক নির্যাতন বা পানিশমেন্ট।
যদি কোন শিক্ষার্থীর অভিভাবক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পরিষদের সদস্য, শিক্ষা কর্মকর্তা বা সংশ্লিষ্ট কেউ টিচারের হাত থেকে বইটা নিয়ে ঐ টিচারকে শব্দ বাই শব্দ পড়া মুখস্থ ধরে এবং না পারলে তার বিচার করে তাহলে এই অবস্থার অবসান হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তবে পানিশমেন্টের ভয়ে শিক্ষার্থীরা দ্রুত ঐ কোম্পানির নোট কিনে নেয়।
সরকারি বেতন ভোগ করে সরকারি বই সঠিকভাবে পাঠদান না করলেও কোম্পানির অবৈধ বেতন ভোগ করে অবৈধ দায়িত্বটা আবার টিচাররা বৈধভাবে পালন করেন। এক্ষেত্রে টিচারদের দায়িত্ব অবহেলার খবর তেমন পাওয়া যায় না যদিও সেটি তার মূল দায়িত্ব পরিপন্থী কাজ। আল্লাহ সুবহানাহু দায়িত্বকে আমানত হিসাবে চিহ্নিত করে সঠিকভাবে আমানত পালন এবং ন্যায়বিচার করতে নির্দেশ দিয়েছেন اِنَّ اللّٰہَ یَاۡمُرُکُمۡ اَنۡ تُؤَدُّوا الۡاَمٰنٰتِ اِلٰۤی اَہۡلِہَا ۙ وَاِذَا حَکَمۡتُمۡ بَیۡنَ النَّاسِ اَنۡ تَحۡکُمُوۡا بِالۡعَدۡلِ ؕ اِنَّ اللّٰہَ نِعِمَّا یَعِظُکُمۡ بِہٖ ؕ اِنَّ اللّٰہَ کَانَ سَمِیۡعًۢا بَصِیۡرًا
﴿٥٨﴾
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন, তোমরা আমানতগুলো প্রাপকদের কাছে পৌঁছে দাও। আর যখন মানুষের বিচার-মীমাংসা করবে, তখন ন্যায়ভিত্তিক মীমাংসা করো। আল্লাহ তোমাদের সদুপদেশ দান করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ শ্রবণকারী, দর্শনকারী।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৫৮)
ইতি, প্রিতি দুইজন একটি এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক টিচারের নিকট টিচারের বাড়িতে গিয়েই প্রাইভেট পড়ে। ইতি, প্রিতিদের বাড়ি থেকে তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আধা কিলোমিটার দুরত্বে। আর ঐ টিচারের বাড়ির দূরত্ব তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অতিক্রম করে আরো ৩ কিলোমিটার। দুই শিক্ষার্থী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত যায়না তবে প্রাইভেট টিচারের বাড়িতে নিয়মিত হেটে হেটে যাওয়া আসা করে। দীর্ঘ পথ নিয়মিত হেটে যাওয়া আসার জন্য প্রায় অসুস্থ থাকে দুজনেই। যতদূর জানা যায় প্রাইভেট টিচার তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত ক্লাস করতে উৎসাহ না দিয়ে তার কাছে প্রাইভেট পড়তে উৎসাহিত করেন। পরীক্ষায় আনুকূল্য পেতে বা বিভিন্ন ধরনের প্রসাশনিক সুযোগ-সুবিধার জন্য ঐ টিচারের কাছে যায় শিক্ষার্থীরা।
ইতি, প্রীতির পরবর্তী ব্যাচের শিক্ষার্থী চূর্মি, অন্যা, মিন্তিয়া, নাজিয়া, জান্নাতরা তাদের টিচার সম্পর্কে বলছিল ‘আমরা যখন অষ্টম শ্রেণীতে উঠছি তখন আমাদের ক্লাসে এসে ঐ টিচার বলেন নবম শ্রেণিতে আমার ক্লাস। সুতরাং অষ্টম শ্রেণী থেকেই আমার কাছে প্রাইভেট পড়তে হবে নাহলে আমার ক্লাসে কিছু পারবেনা।’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে বাড়ি একজন প্রাইভেট টিউটর অভি জানান ঐ টিচার শিক্ষার্থীদের বলেন আমার কাছে প্রাইভেট না পড়লে কিছু বুঝতে পারবেনা ক্লাসে বমি করতে হবে।
অনৈতিকভাবে মেধা ধ্বংস করার নিষিদ্ধ নোট গাইড কোম্পানির নিকট থেকে টাকা নিয়ে পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্তকরন বা ক্লাসে সঠিকভাবে শিক্ষা দান না করে প্রাইভেট পড়িয়ে অধিক উপার্জন করে গাড়ি বাড়ি জমি জমা করলেই সফল হওয়া যায়না। সফলতা-ব্যর্থতার সংজ্ঞা আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা কুরআনে বর্ননা করেছেন قَدۡ اَفۡلَحَ مَنۡ زَكّٰىهَا ۪ۙ﴿۹﴾
নিঃসন্দেহে সে সফলকাম হয়েছে, যে তাকে পরিশুদ্ধ করেছে (সূরা আশ শামস, আয়াত:৯)
وَ قَدۡ خَابَ مَنۡ دَسّٰىهَا ﴿ؕ۱۰﴾ এবং সে ব্যর্থ হয়েছে, যে তা (নাফস)-কে কলুষিত করেছে। (সূরা আশ শামস, আয়াত:১০)
সফলতা বিষয়ে আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা আরো বলেন کُلُّ نَفۡسٍ ذَآئِقَۃُ الۡمَوۡتِ ؕ وَ اِنَّمَا تُوَفَّوۡنَ اُجُوۡرَکُمۡ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ ؕ فَمَنۡ زُحۡزِحَ عَنِ النَّارِ وَ اُدۡخِلَ الۡجَنَّۃَ فَقَدۡ فَازَ وَ مَا الۡحَیٰوۃُ الدُّنۡیَاۤ اِلَّا مَتَاعُ الۡغُرُوۡرِ﴿١٨٥﴾
‘জীব মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। আর কেয়ামতের দিনই তোমাদের কর্মফল পূর্ণমাত্রায় দেওয়া হবে। সুতরাং যাকে (জাহান্নামের) আগুন থেকে দূরে রাখা হবে এবং বেহেশতে প্রবেশ করানো হবে; সেই হবে সফলকাম। আর পার্থিব জীবন ছলনাময় ভোগের সামগ্রী ছাড়া আর কিছুই নয়।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৮৫)
সফল হওয়ার পদ্ধতিও আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা বাতলে দিয়েছেন فَاِذَا قُضِیَتِ الصَّلٰوۃُ فَانۡتَشِرُوۡا فِی الۡاَرۡضِ وَ ابۡتَغُوۡا مِنۡ فَضۡلِ اللّٰهِ وَ اذۡكُرُوا اللّٰهَ كَثِیۡرًا لَّعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ ﴿۱۰﴾
‘নামাজ শেষ হলে তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর দেয়া উত্তম রিজিক অনুসন্ধান করো ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ করো, তোমরা সফলকাম হবে।’ (সুরা জুমা, আয়াত: ১০)
যদি প্রত্যেক মানুষ নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে সজাগ ও সচেতন হয় আর দুনিয়া ও আখিরাতে জবাবদিহির অনুভূতি নিয়ে আপন দায়িত্ব পালন করে, তাহলে রাষ্ট্র ও সমাজের সিংহভাগ অভিযোগ ও সমস্যা দূর হয়ে যাবে। কারণ মুমিন সবকিছুই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করে। আল্লাহর ভয়ে অন্যায় থেকে বিরত থাকে। নিশ্চয়ই সে জানে যে فَمَنۡ یَّعۡمَلۡ مِثۡقَالَ ذَرَّۃٍ خَیۡرًا یَّرَهٗ ؕ
﴿۷﴾
وَ مَنۡ یَّعۡمَلۡ مِثۡقَالَ ذَرَّۃٍ شَرًّا یَّرَهٗ ﴿۸﴾
‘কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা সে (কিয়ামতের দিন) দেখতে পাবে। আর কেউ অণু পরিমাণ মন্দকর্ম করলে তাও সে দেখতে পাবে।’ (সুরা জিলজাল: ৭-৮)
একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী জীম জানায় আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ টিচার ক্লাসে বুঝিয়ে দেন না। শুধু গাইড থেকে পড়া দেন আর পড়া নেন। সঙ্গত কারণে আমাদের টিচারের নিকট প্রাইভেট পড়তে হয়।
শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয় যে কোনো প্রতিষ্ঠানে মাসিক বেতনের বিনিময়ে চাকরিতে যোগদানের অর্থ প্রতিষ্ঠানের নিয়ম অনুসারে মেধা ও শ্রম দিতে প্রতিশ্রুতি দেওয়া। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَوۡفُوۡا بِالۡعُقُوۡدِ ۬ؕ ﴿۱﴾
‘হে ইমানদাররা, তোমরা তোমাদের চুক্তিগুলো পূর্ণ করো।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ০১)
পবিত্র কোরআনে আরো ইরশাদ হয়েছে, وَ الَّذِیۡنَ هُمۡ لِاَمٰنٰتِهِمۡ وَ عَهۡدِهِمۡ رٰعُوۡنَ ۙ
﴿۸﴾
‘(মুমিনদের অনন্য একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে) তারা তাদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে।’ (সুরা মুমিনুন: আয়াত ৮)
টাকার বিনিময়ে নোট গাইড কিনতে বাধ্য করা, ক্লাসে সরকার প্রদত্ত বই না পড়িয়ে বিভিন্ন কোম্পানির নোট পড়ানো বা শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে প্রাইভেট পড়ানো শুধু উল্লেখিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দুটির চিত্র নয়। এটি এদেশের প্রায় ১০০ ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চিত্র।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যদি সরকারি বই পাঠদানের জন্য যোগ্য টিচার না থাকে তাহলে হয় সৎ, দক্ষ ও যোগ্য টিচার নিয়োগ দিতে হবে। (দূরদর্শী জাতি গঠনে যুগোপযোগী শিক্ষাক্রম ও যোগ্যতাসম্পন্ন টিচার জরুরি; September 24, 2024; ইতলবিতল) না হয় পাঠদানের জন্য প্রদত্ত প্রচলিত বই প্রদান না করে নোট গাইড প্রদান করাই শ্রেয়।
আর টিচাররা ক্লাসে যোগ্যতার অভাব, সততার অভাব, অধিক টাকার লোভে ক্লাসের বাইরে প্রাইভেট পড়ানো বা অন্য যে কোন কারনেই হোক শিক্ষার্থীদের সঠিকভাবে পাঠদান করতে ব্যর্থ হলে তাদের অব্যাহতি দিয়ে যারা কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের টিচার নয় কিন্তু তাদের যোগ্যতা , দক্ষতা এবং শিক্ষা কৌশলের কারণে শিক্ষার্থীরা তাদের কাছে প্রাইভেট পড়ে ঐ সকল প্রাইভেট টিউটরদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত টিচার হিসাবে শর্তসাপেক্ষে নিয়োগ দান করেও সমস্যার একটি সমাধান হতে পারে।
কিনায়েত হোসেন একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। ক্লাসে ঝিমানো শিক্ষার্থীদের মারার এবং প্রাইভেট পড়ানোর জন্য বেশ নাম করা এলাকায়। শিক্ষার্থীদের মারার জন্য অভিভাবকরা কয়েকবার তাকে মারধর করার উদ্যোগও নিয়েছেন। কিন্তু ক্ষমা চেয়ে রক্ষা পেয়েছেন। তার ক্ষেত্রেও শুনা যায় শিক্ষার্থীদের ক্লাসে আসার জন্য উৎসাহিত না করলেও অভিভাবকদের মোবাইল ফোনে কল করে শিক্ষার্থীদের তার নিকট প্রাইভেট পড়তে প্ররোচনা করেন।
মারামারি করে শিক্ষার্থীদের কোন বিষয় বুঝানো সহজ নয়। মারামারির মাধ্যমে যদি ভালো শিক্ষা দেওয়া যেত তাহলে সারা বিশ্বে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মারামারির জন্য বিখ্যাত পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশই আজ বিশ্বকে নেতৃত্ব দিত। শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে স্বাধীনতা দেওয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আজ বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতনা।
মারামারির বা পেটানোর সম্পর্ক হলো কামার পেশার সাথে। কেননা যে কামার গরম লোহায় যত ভালো পেটাতে পারে তার জন্য দা, বটি, খুন্তি, কাচি তৈরি করা তত সহজ। আর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে টিচারের মারামারি নয় ব্রেইন টু ব্রেইন সম্পর্ক থাকা প্রয়োজন। অর্থাৎ যে টিচার তার ব্রেইন দিয়ে ভালো বুঝাতে সক্ষম তার শিক্ষার্থীরাও তাদের ব্রেইন দিয়ে ঐ বিষয়ে ভাল বুঝতে সক্ষম হয়।
একই বিদ্যালয়ের অন্য একজন টিচারের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে ক্লাস চলাকালীন সময়ে দায়িত্ব অবহেলা করে স্কুলের পাশেই এক বাড়ির ওয়াইফাই ব্যবহার করে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্রাউজ করার। এসব বিষয়ে অভিভাবকরা সরাসরি স্কুল ম্যানেজিং কমিটি, শিক্ষা অফিসে অভিযোগ না করলেও ফেসবুক বা পাড়া, মহল্লার আড্ডায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
দায়িত্ব অবহেলা করে এবং নির্দিষ্ট বেতন ভাতা বা রিয্ক গ্রহণ করা হারাম, হালাল নয়। আল্লাহ তার রাসুলদেরও নির্দেশ দিয়েছেন হালাল খাদ্য গ্রহণ করার জন্য یٰۤاَیُّهَا الرُّسُلُ كُلُوۡا مِنَ الطَّیِّبٰتِ وَ اعۡمَلُوۡا صَالِحًا ؕ اِنِّیۡ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ عَلِیۡمٌ ﴿ؕ۵۱﴾
‘হে রাসুলরা, তোমরা পবিত্র খাদ্য আহার করো এবং ভালো কাজ করে যাও। তোমরা যেসব কাজ করো তা সম্পর্কে আমি পরিপূর্ণ অবগত।’ (সুরা মুমিনুন: ৫১)
শুধু রাসুলদের নির্দেশ দিয়েই ক্ষান্ত হননি সমস্ত মানবজাতির জন্যও এমন ঘোষণা দিয়ে টিচারসহ অন্যান্য পেশাজীবী যারা শয়তানি করে যে অধিক উপার্জনের পথ তৈরি করছে তাদের সেই শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ না করতে নির্দেশনা দিয়েছেন یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ كُلُوۡا مِمَّا فِی الۡاَرۡضِ حَلٰلًا طَیِّبًا ۫ۖ وَّ لَا تَتَّبِعُوۡا خُطُوٰتِ الشَّیۡطٰنِ ؕ اِنَّهٗ لَكُمۡ عَدُوٌّ مُّبِیۡنٌ ﴿۱۶۸﴾
‘হে মানবজাতি, তোমরা পৃথিবীর হালাল ও পবিত্র বস্তু আহার করো, আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, নিঃসন্দেহে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সুরা বাকারা: ১৬৮)
প্রাইভেট পড়া বা পড়ানো অন্যায় কিছু নয়। তবে সরকারি বেতন ভোগ করে ক্লাসে সঠিকভাবে পাঠদান না করে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে পাঠদান করা অন্যায়।
প্রতিশ্রুত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করার দরুন প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক এবং কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচারসহ সকল দূর্নীতিবাজের জন্য সরকার প্রদত্ত বেতন ভোগ করা হারাম। মহান আল্লাহ সুবহানাহু তা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন বিষয়ে কুরআনে ঘোষণা করেছেন
اِنَّ خَیۡرَ مَنِ اسۡتَاۡجَرۡتَ الۡقَوِیُّ الۡاَمِیۡنُ ‘সর্বোত্তম কর্মী সেই ব্যক্তি, যে শক্তিমান ও দায়িত্বশীল।’ (সুরা কাসাস, আয়াত : ২৬)
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীদের নীতি নৈতিকতা, দক্ষতা, যোগ্যতা ইত্যাদি অর্জন করার কথা কিন্তু অতি দুঃখজনক হলেও সত্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টিচাররা সততা, যোগ্যতা, দক্ষতার বদলে অসততা, অদক্ষতা, অযোগ্যতা ইত্যাদি নিয়ে ঘূষ, দূর্নীতি, দলীয়করণের মাধ্যমে নিয়োগ পেয়ে তাদের চরিত্রের প্রতিফলন করছে ফলে শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং জাতির কাঙ্ক্ষিত আশা অপূরণীয় রয়েছে।
অন্যদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বছরের প্রথম ও শেষ দুই মাস বছরকে স্বাগতম এবং বিদায় জানাতে, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা ও পরীক্ষার কেন্দ্র থাকার কারণে, শাহরি রমাদান, ঈদ, পূজা, শীতকালীন, গ্রীষ্মকালীন ইত্যাদি কারণে বছরের প্রায় ৯ মাসই বন্ধই থাকে কিন্তু তারা ১২ মাসের বেতন ভাতা এবং বোনাস গ্রহণ করেন। শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া আসার জন্য প্রচুর সময় নষ্ট হয় শিক্ষাটা ক্লাস নয় বাইরে থেকে গ্রহন করতে হয়।
তাছাড়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া আসার সময় পর্যাপ্ত নিরাপত্তার অভাবে ইভ-টিজিং, হত্যা, মারামারি, রাহাজানি, ধর্ষণ ইত্যাদির অহরহ উদাহরণ রয়েছে।
সুতরাং মেধা ধ্বংস করা অবৈধ নোট গাইড, অসৎ, অদক্ষ, অযোগ্য টিচারদের দৌরাত্ম থেকে জাতিকে বাঁচাতে কমপক্ষে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সকল টিচারদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে কারনিক দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে শুধু একটি রেজিস্ট্রেশন এবং এক্সাম কেন্দ্রে পরিণত করা সময়ের দাবি।
এতে করে শিক্ষার্থীরা তাদের পরিবারের সদস্য অথবা যারা প্রকৃত পক্ষে যোগ্য টিউটর আছে তাদের থেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে শিক্ষা গ্রহণ করে সুবিধামতো সময়ে উক্ত কেন্দ্রে গিয়ে রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সনদ গ্রহণ করে জাতির সেবায় ভালো ভাবে নিয়োজিত হতে পারবে ইনশাআল্লাহ।
এমফিল গবেষক (এবিডি)
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়