২০২৫ সালটি সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থানরত বাংলাদেশি প্রবাসীদের জন্য ছিল নানা চ্যালেঞ্জ, কূটনৈতিক কৌশল এবং আশার নতুন দিগন্তের এক স্মারক অধ্যায়। বছরজুড়ে ভিসা নিষেধাজ্ঞা, অভিবাসন সংকট, সম্পত্তি বিনিয়োগ এবং রাজনৈতিক বিতর্কের মধ্য দিয়ে গেলেও একাধিক অগ্রগতি বাংলাদেশের অবস্থানকে সুদৃঢ় করেছে।
ভিসা নিষেধাজ্ঞা: স্বপ্নভঙ্গের দীর্ঘশ্বাস
২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য নতুন ভিসা প্রদান সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয় আমিরাত সরকার। এতে হাজারো প্রবাসীর কর্মজীবন ও পারিবারিক পরিকল্পনা অনিশ্চয়তায় পড়ে। ওয়ার্ক পারমিট, রেসিডেন্সি ও ফ্যামিলি ভিসা পাওয়া হয়ে ওঠে কঠিন।
ভুয়া নথিপত্র ও অবৈধ অভিবাসনের অভিযোগে আমিরাত এই সিদ্ধান্ত নেয়, যা দুই দেশের সম্পর্কেও ছায়া ফেলে।
কূটনীতিতে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট সামিটে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস ও আমিরাত সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়।
পরবর্তীতে আমিরাতের সহনশীলতা মন্ত্রী শেখ নাহিয়ান বিন মুবারক আল নাহিয়ান ঢাকা সফরে এসে প্রধানমন্ত্রী উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন, যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে নতুন আস্থা তৈরি করে।
প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা কার্যক্রম ধাপে ধাপে স্বাভাবিক হবে বলে জানানো হয়।
ব্যবসায় সাফল্য, সংকটের মধ্যেও সম্ভাবনা
ভিসা জটিলতা থাকা সত্ত্বেও, ব্যবসায় বাংলাদেশিদের অগ্রগতি থেমে থাকেনি। দুবাই চেম্বার অব কমার্স অনুযায়ী, বাংলাদেশি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৯ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকেই বাংলাদেশ ও আমিরাতের মধ্যে অ-তেল বাণিজ্য বেড়েছে ৯ শতাংশ।
ফুড, রিটেইল, কনসালটেন্সি ও গার্মেন্টস খাতে বাংলাদেশিরা দৃশ্যমান সাফল্য দেখিয়েছেন।
সম্পত্তি বিনিয়োগ: আশার পাশাপাশি বিতর্ক
দুবাইয়ে ফ্ল্যাট, ভিলা এবং কমার্শিয়াল স্পেসে বাংলাদেশিদের বিনিয়োগ আশাব্যঞ্জক হলেও, একাধিক বিতর্কও সামনে এসেছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, কিছু বাংলাদেশি প্রভাবশালী ব্যক্তি ও রাজনীতিবিদ বিপুল সম্পত্তির মালিক।
বিশেষ করে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে ৪৮২টি সম্পত্তির মালিকানার অভিযোগ উঠেছে, যার আনুমানিক মূল্য ২৯৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
প্রবাসীদের ভবিষ্যৎ ভাবনা
বর্তমানে প্রায় ৭ লাখ বাংলাদেশি নাগরিক সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাস করছেন।
তারা আশাবাদী, ২০২৫ সালের মধ্যেই ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হবে এবং প্রবাসে জীবন আবারও হবে স্বাভাবিক ও স্থিতিশীল।
সঙ্কট কাটিয়ে সম্ভাবনার পথে এগিয়ে চলা এই যাত্রা শুধু প্রবাসীদের নয়, পুরো দেশের জন্যই এক ইতিবাচক বার্তা।