সত্যজিৎ দাস (মৌলভীবাজার প্রতিনিধি):
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হিন্দু ধর্মাবলম্বী যুবসমাজ, দম্পতি ও ধর্মীয় সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে ধারাবাহিকভাবে অশ্লীল ও বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করার অভিযোগে বড়লেখার মুছেগুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সুদর্শন দে–র বিরুদ্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে।
মামলাটি দায়ের করেছেন উপজেলার নিজ দক্ষিণভাগ গ্রামের বাসিন্দা আকাশ দেব, যিনি ভুক্তভোগীদের পক্ষে ৭ মে সিলেট সাইবার ট্রাইব্যুনালে এজাহার জমা দেন। মামলাটি গ্রহণ করে বিজ্ঞ আদালত সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩-এর ২৪, ২৫(২), ২৬ ও ২৯ ধারায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মৌলভীবাজার জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশকে।
আসামি সুদর্শন দে,উপজেলার আহমদপুর গ্রামের বাসিন্দা এবং বর্তমানে মুছেগুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। মামলার বিবরণে জানা যায়, চলতি বছরের ৫ এপ্রিল নিজ দক্ষিণভাগ গ্রামে অনুষ্ঠিত সার্বজনীন চড়ক পূজায় অংশ নিয়ে তিনি পূণ্যার্থীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ ও ইভটিজিং করেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত মন্দির কমিটি ও স্বেচ্ছাসেবকদের প্রতিবাদে তিনি শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণ করেন। যদিও তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয়ভাবে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়েছিল,তবে এরপর থেকেই তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন আইডি থেকে হিন্দু ধর্মীয় গোষ্ঠী, স্বামী-স্ত্রী ও পূজা কমিটির সদস্যদের উদ্দেশ করে অশালীন ও মানহানিকর মন্তব্য প্রচার করতে থাকেন।
এই পোস্টগুলো ভুক্তভোগীদের সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী,সিলেট জজকোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট সজীব কান্তি দেব জানিয়েছেন, আসামির বিরুদ্ধে যথাযথ প্রমাণসহ অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে এবং আদালত ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু করার জন্য মৌলভীবাজার ডিবিকে নির্দেশ দিয়েছেন।
ঘটনাটি স্থানীয় হিন্দু সমাজে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। ভুক্তভোগীরা দ্রুত ন্যায়বিচার ও অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
তবে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে সুদর্শন দে’র দাবি: “ফেসবুক আইডি আমার নয়,আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত হচ্ছে “
বিষয়টি নিয়ে অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক সুদর্শন দে জানান,তিনি সনাতন ধর্মের প্রতি যথাযথ সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শনের পক্ষপাতী এবং সমাজে প্রচলিত কিছু তামসিক সংস্কৃতির পরিবর্তন চান। তিনি বলেন,“আমি সব ধরনের তামসিকতাকে ঘৃণা করি। ধর্মকে যথাযথ সম্মান দিই এবং সেটা আমার বিশ্বাসের জায়গা।”
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপত্তিকর পোস্টের অভিযোগ প্রসঙ্গে সুদর্শন দে দাবি করেন,“যে ফেসবুক আইডি থেকে আপত্তিকর পোস্টের অভিযোগ উঠেছে,সেটা আমার নয়। আমি যে আইডি চালাই,সেটা থেকে কখনোই অশ্লীল পোস্ট বা কোন নেতাদের নিয়ে কিছু লিখিনি।”
তিনি আরও বলেন,“যিনি আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন,তিনি হয়তো ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে এটা করেছেন। আমি বিশ্বাস করি,মৌলভীবাজার ডিবি এবং বিজ্ঞ আদালত নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সত্য উদঘাটন করবে।”