দীর্ঘদিন ধরে চলমান উত্তেজনার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক সংঘর্ষ দুই দেশকে বিপুল অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে ঠেলে দিয়েছে। চলমান সংঘর্ষের প্রথম চার সপ্তাহে সামরিক ব্যয় ও পরোক্ষ অর্থনৈতিক ক্ষতির হিসাব একত্রে দাঁড়িয়েছে ৫০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। এই বিপুল ক্ষয়ক্ষতির চিত্র তুলে ধরেছে এক বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদন, যা শনিবার (১০ মে) প্রকাশ করেছে জিও নিউজ।
ভারতের পক্ষ থেকে প্রতিদিন প্রায় ১০০টি করে বিমান হামলা চালানো হচ্ছে, যেখানে রাফাল, মিরাজ ২০০০, সু-৩০ এমকেআই এবং তেজসের মতো উন্নত যুদ্ধবিমান ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রতিটি অভিযানের গড় ব্যয় প্রায় ৮০ হাজার ডলার, এবং মাসব্যাপী নির্ভুল অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যয় ছাড়িয়েছে প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার। এর পাশাপাশি ড্রোন নজরদারি ও ইলেকট্রনিক যুদ্ধের জন্য প্রতিদিন ১০০ মিলিয়ন ডলার খরচ হচ্ছে, যার মাসিক হিসাব ৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
আরও বড় খরচ হচ্ছে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায়। প্রতিদিন ১০টি ব্রাহ্মোস এবং ১০-২০টি প্রলয় বা এমএলআরএস সিস্টেম ব্যবহারে গড়ে খরচ হচ্ছে ১৫০ মিলিয়ন ডলার, যা মাস শেষে দাঁড়িয়েছে ৪.৫ বিলিয়ন ডলারে। সামগ্রিক সামরিক প্রস্তুতি বজায় রাখতে সেনা মবিলাইজেশন, জ্বালানি, এস-৪০০ ও অন্যান্য আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় দৈনিক খরচ হচ্ছে প্রায় ১১০ মিলিয়ন ডলার, চার সপ্তাহে যা পৌঁছেছে ৫.৪ বিলিয়ন ডলারে।
অন্যদিকে পাকিস্তানের সামরিক ব্যয় তুলনামূলক কম হলেও মোট ব্যয় অনেক বড় ধাক্কা তৈরি করেছে। দেশটির বিমান হামলা ও আকাশ প্রতিরক্ষা প্রস্তুতিতে প্রতিদিন ব্যয় হচ্ছে ২৫ মিলিয়ন ডলার, মোটে ১ বিলিয়ন ডলার। ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে অতিরিক্ত খরচ হয়েছে ৪৫০ মিলিয়ন ডলার। সীমান্ত নজরদারি, রাডার ও গোয়েন্দা কার্যক্রমে প্রতিদিন ১৫ মিলিয়ন ডলার করে ব্যয় হয়েছে আরও ৪৫০ মিলিয়ন ডলার।
সামরিক ব্যয়ের পাশাপাশি দুই দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি আরও গভীর। ভারতের জিডিপিতে সরাসরি ক্ষতি হয়েছে আনুমানিক ১৫০ বিলিয়ন ডলার। আর্থিক বাজারে অস্থিরতা ও মুদ্রার অবমূল্যায়নে ক্ষতি ৯০ বিলিয়ন ডলার, বাণিজ্য ও সরবরাহব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটায় ক্ষতি ৮০ বিলিয়ন ডলার এবং সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগে ধস নেমেছে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। পাকিস্তানও একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে জিডিপি ক্ষতি ২৫ বিলিয়ন, মুদ্রা অস্থিরতা ও বাজারে পতনে ১৫ বিলিয়ন, বাণিজ্য সংকোচনে ১২ বিলিয়ন এবং এফডিআই ও আন্তর্জাতিক সহায়তায় ক্ষতি ৫ বিলিয়ন ডলার।
সব মিলিয়ে সামরিক খরচ ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের হিসেবে দেখা যাচ্ছে, মাত্র চার সপ্তাহের সংঘর্ষেই দুই দেশের সম্মিলিত ক্ষতি ৫০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এই বিপুল ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি মানবিক ও কূটনৈতিক সংকট আরও গভীর হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।