জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) সহ-সভাপতি ও দলীয় মুখপাত্র রাশেদ প্রধান সতর্ক করেছেন যে, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে প্রস্তাবিত মানবিক করিডোর শেষ পর্যন্ত মানবিক রূপ ধরে রাখবে না—বরং এর পেছনে সামরিক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য লুকিয়ে থাকতে পারে। তাই এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালানোর আহ্বান জানান।
বৃহস্পতিবার (১ মে) পল্টনের শফিউল আলম প্রধান মিলনায়তনে ‘মে দিবসের ডাক, বৈষম্যমুক্ত শ্রম অধিকার চাই’ শীর্ষক এক শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। রাশেদ প্রধান বলেন, জাতিসংঘ বা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যেই প্রস্তাব আসুক না কেন, মানবিক করিডোরের অতীত অভিজ্ঞতা অত্যন্ত রক্তাক্ত এবং ব্যর্থতায় ভরা। তিনি আর্মেনিয়া-আজারবাইজান, বসনিয়া-হার্জেগোভিনা, কঙ্গো, সিরিয়া এবং সর্বশেষ ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “এসব উদাহরণ থেকে পরিষ্কার, মানবিক করিডোরের নামে অনেক সময় অন্য উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হয়, যা আমাদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।”
তিনি জোর দিয়ে বলেন, “এই প্রস্তাব মানবিক শোনালেও বাস্তবে তা অমানবিক ফলাফল বয়ে আনতে পারে। ইতিহাস আমাদের সাবধান করেছে। বাংলাদেশ যেন আরেকটি ভ্রান্ত চুক্তির শিকার না হয়, সেজন্য প্রয়োজন সবার সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা ও জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ।”
শ্রমিক অধিকার নিয়েও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন রাশেদ প্রধান। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের শ্রমিকেরা সবচেয়ে বেশি পরিশ্রম করেও সবচেয়ে কম সম্মান পায়। সময়মতো বেতন মেলে না, ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত হয় না, আর নিরাপদ কর্মপরিবেশ যেন স্বপ্নের মতো। মাত্র দুটি মাসে—জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে—দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ২১৩ জন শ্রমিকের।”
প্রবাসী শ্রমিকদের অবহেলার কথাও তুলে ধরেন তিনি। “যারা রেমিটেন্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রাখে, তাদের মৃত্যুর পর পর্যন্ত রাষ্ট্র মর্যাদা দেয় না। প্রবাসে একজন শ্রমিক মারা গেলে তার মরদেহ ফেরত আনাও আমাদের সরকারের পক্ষে নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ে,” বলেন রাশেদ প্রধান।
সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর ভাষায় সমালোচনা করে তিনি বলেন, “এই ফ্যাসিস্ট শাসনের মধ্যে দেশ ধ্বংসের মুখে পড়েছিল। যাদের শ্রমে আজও দেশ টিকে আছে, তারা দেশের শ্রমিক শ্রেণি। তাদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত না হলে উন্নয়ন কেবল একটি ভাঁওতা।”
শ্রমিক জাগপার সভাপতি আসাদুজ্জামান বাবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন যুব জাগপার সভাপতি নজরুল ইসলাম বাবলু, ক্রীড়া সম্পাদক জনি নন্দী, শ্রমিক নেতারা মো. মওদুদ, আলী আকবর, জব্বার আলী, ফারুক মিয়া, কামাল হোসেন এবং আ. রহিম প্রমুখ।