কাশ্মীরে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষাপটে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক ফের একবার সংকটজনক মোড়ে পৌঁছেছে। ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর নৃশংস হামলার পর নতুন করে উত্তেজনার সূচনা হয়েছে। নয়াদিল্লি হামলার জন্য সরাসরি ইসলামাবাদকে দায়ী করে বলেছে, এ হামলার পেছনে পাকিস্তান-সমর্থিত জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর হাত রয়েছে। হামলায় ২৬ জন নিহত হন এবং তিন সন্দেহভাজনের মধ্যে দুজন পাকিস্তানি নাগরিক বলে দাবি করেছে ভারত। এর পর থেকেই নিয়ন্ত্রণরেখা (LoC) বরাবর টানা পাঁচ রাতে গোলাগুলি, ড্রোন ভূপাতিতের মতো ঘটনাগুলো দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ককে আরও তলানিতে নিয়ে গেছে।
এই প্রেক্ষাপটে অনেকেই জানতে চাইছেন — ভারত কি এবার সত্যিই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালাবে?
মোদি সরকারের অবস্থান
সাম্প্রতিক ঘটনাবলির প্রেক্ষাপটে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল এবং তিন বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে এক জরুরি বৈঠক করেছেন। বৈঠক শেষে ভারতের সরকারিভাবে জানানো হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনীকে ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ দিয়েছেন— তারা কখন, কীভাবে এবং কোন লক্ষ্যে জবাব দেবে, সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার বাহিনীর ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এমন ঘোষণার অর্থ, ভারতের পক্ষ থেকে সীমিত পর্যায়ের ‘surgical strike’, air strike বা targeted operation চালানো হতে পারে— যেমনটি ২০১৬ ও ২০১৯ সালে উরি এবং পুলওয়ামা হামলার পর হয়েছিল। তবে সরাসরি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ বা ভূখণ্ড দখল জাতীয় বড় পদক্ষেপের সম্ভাবনা এখনো কম, কারণ তার কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং মানবিক পরিণতি বিশাল।
যুদ্ধের ঝুঁকি ও পারমাণবিক ছায়া
ভারত এবং পাকিস্তান— উভয়েই পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। তাই দুই দেশের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ শুরু হলে তা শুধু দক্ষিণ এশিয়ার জন্য নয়, গোটা বিশ্বের জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। ইতিহাস বলছে, অতীতে যতবারই দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত উত্তেজনা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে, আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক চাপে শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ এড়ানো গেছে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া ও জাতিসংঘের মতো শক্তিগুলোর তৎপরতায় একাধিকবার যুদ্ধবিরতির পথ খোঁজা হয়েছে।
তবে ২০১9 সালের বালাকোট এয়ারস্ট্রাইকের উদাহরণকে সামনে রেখে বলা যায়— ভারত যখনই মনে করেছে, সীমান্তে জঙ্গি হামলা তাদের জন্য জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখন তারা ‘জবাব’ দিয়েছে। মোদি সরকারের ‘কড়া জবাব’ নীতির ধারাবাহিকতায় এবারও সীমিত পর্যায়ে সামরিক প্রতিক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
অভ্যন্তরীণ চাপ ও রাজনৈতিক বাস্তবতা
ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও বর্তমানে ‘জাতীয় নিরাপত্তা’ একটি বড় ইস্যু। আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে জনমত প্রভাবিত করতে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া মোদি সরকারের রাজনৈতিক কৌশলের অংশও হতে পারে। বিশেষ করে মিডিয়া ও বিরোধী দলগুলোর চাপ এবং সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা উদ্বেগ— সরকারকে শক্ত অবস্থান নিতে বাধ্য করছে।
পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া
পাকিস্তান এই অভিযোগগুলোকে অস্বীকার করেছে এবং দাবি করেছে, ভারত ভিত্তিহীনভাবে দোষারোপ করছে। তবে ইসলামাবাদ থেকেও হুমকি এসেছে— পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, পরিস্থিতির অবনতি হলে “আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হতে পারে।” যদিও পরে তিনি বলেন, তাঁর বক্তব্য ‘ভুলভাবে উপস্থাপিত’ হয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
জাতিসংঘ এবং যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানানো হয়েছে। জাতিসংঘে ভারতের রাষ্ট্রদূত পাকিস্তানকে ‘দুর্বৃত্ত রাষ্ট্র’ বলেও অভিহিত করেছেন। অন্যদিকে পাকিস্তান বলেছে, তারা ভারতকে আন্তর্জাতিক আদালতে নিয়ে যাবে সিন্ধু পানিচুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়ে।
তথ্য-উপাত্ত বিচার করলে দেখা যায়, সরাসরি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের সম্ভাবনা এখনো কম। তবে ভারতের পক্ষ থেকে সীমিত সামরিক প্রতিক্রিয়া, যেমন জঙ্গি ঘাঁটিতে আঘাত বা ড্রোন হামলার মতো পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। যুদ্ধ না হলেও উত্তেজনা দীর্ঘায়িত হতে পারে এবং সীমান্তে সংঘর্ষের সংখ্যা বাড়তে পারে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আন্তর্জাতিক মহল এই পরিস্থিতিকে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের চেষ্টা চালাবে, কারণ দুই পারমাণবিক দেশের মধ্যে যুদ্ধ শুধু তাদের নয়, গোটা বিশ্বব্যবস্থার ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।
আপনি কি চান, আমি সাম্প্রতিক কূটনৈতিক অবস্থান ও যুদ্ধ সম্ভাবনা নিয়ে একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ তৈরি করি?