দেশের বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। ২০২4 সালের তুলনায় ২০২৫ সালের প্রথম চার মাসেই অন্তত ১৪টি আত্মহত্যার খবর এসেছে। এসব ঘটনার পেছনে রয়েছে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার দীর্ঘ অবহেলা, পরিবার ও সমাজের চাপে নতজানু হয়ে পড়া তরুণ-তরুণীরা, এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপযুক্ত সহায়তার অভাব।
চাপ আর প্রত্যাশার ভারে নুয়ে পড়া তরুণ মন
বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ মানেই অনেক তরুণের জীবনে “সাফল্যের শুরু” হিসেবে বিবেচিত হয়। পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, এমনকি নিজের কাছ থেকেও তৈরি হয় এক ধরনের ‘অসীম প্রত্যাশা’। এ প্রত্যাশা পূরণ করতে গিয়ে অনেকেই মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন। শিক্ষাজীবনের প্রতিযোগিতা, অর্থনৈতিক টানাপোড়েন, প্রেমঘটিত জটিলতা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘নিখুঁত জীবনের’ চাপ অনেকের জীবনকে ভারী করে তোলে।
মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে নীরবতা
বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলা এখনো বড় ধরনের সামাজিক ট্যাবু। “পাগল নাকি?”—এই একটিমাত্র বাক্যই কাউকে থামিয়ে দিতে যথেষ্ট। ফলে বিষণ্নতা, উদ্বেগ বা হতাশার মতো মানসিক সংকটগুলো নীরবেই দানা বাঁধে। গবেষণা বলছে, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের প্রায় ৪০ শতাংশ কোনো না কোনোভাবে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগেন, কিন্তু তার মধ্যে মাত্র ৫-৭ শতাংশ সহায়তা চান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা: কী ঘাটতি রয়েছে?
বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই পেশাদার কাউন্সেলিং সুবিধা। মানসিক স্বাস্থ্য সেবা কোথায় পাওয়া যায়, সেটিও জানেন না অনেক শিক্ষার্থী। একটি জরিপ অনুযায়ী, দেশের ৫০টিরও বেশি পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ১০-১২টিতে ফুল-টাইম সাইকোলজিকাল কাউন্সেলর আছেন।
আরও সমস্যা দেখা দেয় প্রশাসনিক অসংবেদনশীলতায়। আত্মহত্যার পর প্রশাসনের একঘেয়ে প্রেস বিজ্ঞপ্তি এবং দায় এড়ানোর মনোভাব পরিবারগুলোকে আরও ভীত ও অসহায় করে তোলে।
সামাজিক বন্ধন দুর্বল হওয়াও কারণ
বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে একাকীত্ব, বন্ধুবিহীন জীবন, অথবা মাদকাসক্ত পরিবেশও মানসিক বিপর্যয়ের বড় কারণ। অনেকেই সমস্যার কথা বলতে পারেন না, শোনার কেউ নেই বলেই বিশ্বাস করেন।
সমাধানের উপায় কী?
- প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসিক স্বাস্থ্য ইউনিট গঠন বাধ্যতামূলক করা উচিত।
- ক্লাসরুমেই মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা গড়ে তোলা, যেন শিক্ষার্থীরা নিজেদের সংকট চিহ্নিত করতে পারেন।
- ক্যাম্পাসে ‘পিয়ার সাপোর্ট গ্রুপ’ চালু করা যেতে পারে, যেখানে একে অপরের কথা শোনা হবে।
- আত্মহত্যার খবর প্রকাশের সময় গাইডলাইন মেনে রিপোর্টিং করতে হবে—নাহলে “কপি ক্যাট” আত্মহত্যার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
- পরিবারকেও বুঝতে হবে, ‘সফলতা’ মানে সবসময় জিপিএ ৪.০০ নয়—মানুষিক শান্তি তার চেয়েও বড়।