‘জুলাই অভ্যুত্থান’ নিয়ে একটি সংবাদ সম্মেলনে ‘অবমাননাকর’ প্রশ্ন করার অভিযোগে দু’টি টেলিভিশন চ্যানেলের তিনজন সাংবাদিককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এছাড়া আরও একজন সাংবাদিককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছে চ্যানেল আই কর্তৃপক্ষ। এই ঘটনা ঘিরে সাংবাদিক মহলে উদ্বেগ ও আলোচনার ঝড় উঠেছে।
চাকরিচ্যুত সাংবাদিকদের মধ্যে রয়েছেন দীপ্ত টিভির দুইজন এবং এটিএন বাংলার একজন রিপোর্টার। মঙ্গলবার থেকে দীপ্ত টিভি কর্তৃপক্ষ সংবাদ সম্প্রচার বন্ধ রেখেছে। চ্যানেলের স্ক্রলে প্রচারিত এক ঘোষণায় জানানো হয়েছে, “অনিবার্য কারণবশত সকল সংবাদ পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।”
জানা গেছে, সম্প্রতি ঢাকায় একটি রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই সাংবাদিকরা ‘জুলাই অভ্যুত্থান’ নিয়ে প্রশ্ন তুললে আয়োজক পক্ষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। সেই ঘটনার পরপরই সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
এদিকে, চ্যানেল আইও তাদের একজন প্রতিবেদককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে চ্যানেলটি বিষয়টি স্বীকার করেনি, তবে সাংবাদিক মহলে তা নিশ্চিত হয়েছে।
এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন ও গণমাধ্যম অধিকারকর্মীরা। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) এবং বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, “একটি প্রশ্ন করাকে কেন্দ্র করে সাংবাদিকদের এভাবে চাকরিচ্যুত করা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত। এটি গণমাধ্যমে ভয়ের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠারই আরেকটি নজির।”
প্রবীণ সাংবাদিক ও বিশ্লেষক মাহফুজ আনাম বলেন, “সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করা সাংবাদিকের পেশাগত অধিকার। এভাবে শাস্তি দিলে সাংবাদিকরা ন্যায্য প্রশ্ন করতে ভয় পাবে—যা স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থী।”
সাংবাদিকদের একাংশ মনে করছেন, এই ঘটনার মাধ্যমে গণমাধ্যমের ওপর ‘অদৃশ্য চাপ’ আরও স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছে। পাশাপাশি, দীপ্ত টিভির সংবাদ সম্প্রচার বন্ধ রাখার ঘটনাও গণমাধ্যমের চলমান সংকটকে তুলে ধরছে।
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট টেলিভিশন চ্যানেলগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে সাংবাদিক ছাঁটাই বা সংবাদ বন্ধের বিষয়ে বিস্তারিত কোনো বিবৃতি দেয়নি।