বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক সময়ের অপ্রতিদ্বন্দ্বী দল আওয়ামী লীগ, আজ গভীর সংকটের মুখোমুখি। গত বছরের গণঅভ্যুত্থানের পর দলটি ক্ষমতাচ্যুত হলে, পরিস্থিতি দ্রুত বদলাতে শুরু করে। দলের অনেক শীর্ষ নেতাসহ শেখ হাসিনা দেশ ছাড়তে বাধ্য হন, যা দলটিকে একটি অভূতপূর্ব নেতৃত্ব সংকটে ফেলে দেয়।
তৃণমূল পর্যায়ে দলের নেতাকর্মীরা সম্পূর্ণ দিশেহারা হয়ে পড়ে। দীর্ঘ দিন ধরে ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা নেতারা হঠাৎ করে ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাওয়ায়, কর্মীরা দিকনির্দেশনা হারিয়ে ফেলে। অনেকে জীবন বাঁচাতে পালিয়ে বেড়াতে শুরু করেন, আবার অনেকে গ্রেফতার হন। দলের স্থানীয় কার্যালয়গুলো কার্যত জনশূন্য হয়ে পড়ে, এবং দলীয় কার্যক্রম স্থবির হয়ে যায়।
আওয়ামী লীগের সামনে এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, তারা কি এই বিপর্যয় কাটিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে? জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে হত্যা ও ফ্যাসিবাদের মতো গুরুতর অভিযোগ তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে আরও জটিল করে তুলেছে। বিরোধী দলগুলো আন্দোলনে নিহত নেতাকর্মীদের বিচার দাবি করছে, এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিয়েছে।
বিপর্যস্ত আওয়ামী লীগ বর্তমানে আকস্মিক ঝটিকা মিছিল এবং সামাজিক মাধ্যমের ওপর অনেকটা নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। কিন্তু বড় আকারের রাজনৈতিক কর্মসূচি আয়োজনের মতো সাংগঠনিক সক্ষমতা তাদের নেই। দলের অভ্যন্তরে নতুন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে, তবে গ্রেফতার এবং মামলার ভয়ে তেমন কেউই প্রকাশ্যে আসতে সাহস দেখাচ্ছেন না।
আওয়ামী লীগের নেতারা অভিযোগ করছেন যে সরকার তাদের নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেফতার করছে, এবং তাদের উপর নানাভাবে দমন-পীড়ন চালাচ্ছে। দলের মধ্যে ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ এর যে আলোচনা চলছে, তাকে অনেকেই দল ভাঙার ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আওয়ামী লীগের সামনে একটি দীর্ঘ এবং কঠিন পথ। তাদের দীর্ঘদিনের শাসনামলে বিরোধী দলগুলো অসংখ্য মামলা ও গ্রেফতারের শিকার হয়েছে। এছাড়াও, দুর্নীতি ও দুঃশাসনের অভিযোগ দলটির ভাবমূর্তিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এক সময়ের মিত্র দলগুলোও এখন আর তাদের পাশে নেই।
গণঅভ্যুত্থানের ধাক্কা সামলে আওয়ামী লীগ কিভাবে ঘুরে দাঁড়াবে? বিরোধী দলগুলোর প্রবল ক্ষোভ এবং নিষিদ্ধের দাবি মোকাবেলা করে, তাদের পক্ষে রাজনীতিতে ফিরে আসা কি আদৌ সম্ভব? এসব প্রশ্নের উত্তর এখন সময়ের হাতে।