স্বাধীনতার পর থেকে বরাবরই দেশের জনগণ প্রায় প্রতিটি নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ দেখেছে। বহুবার গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ছাড়া অনেক রাজনৈতিক দল দেশপরিচালনা করেছেন। মাত্র কয়েকটি নির্বাচন ছাড়া সকল নির্বাচনকে জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছেন। প্রায় প্রতিটি নির্বাচনে দেশের বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। নির্বাচন এক পক্ষের জন্য উৎসবমুখর হলেও অপরপক্ষের জন্য ছিল বেদনাদায়ক-মর্মান্তিক। নির্বাচনকে ঘিরে বংশে বংশে দাঙ্গা এটি ছিল বাংলার স্বাভাবিক দৃশ্য। নির্বাচনে উৎসব মুখরতা নয় নির্বাচন রাষ্ট্রের একটি অংশ এবং নাগরিকের দায়িত্ব। নির্বাচনের মাধ্যমে সৎ আদর্শ নীতিবান সর্বজন গ্রহণযোগ্য কল্যাণকর ব্যক্তি নির্বাচিত হয়ে জনগণের উন্নয়ন সাধিত করবেন এটি থাকে সবার প্রত্যাশা। যাদের মাধ্যমে একটি উত্তম সমাজ ব্যবস্থা তথা রাষ্ট্র উপহার পাবে দেশবাসী। প্রয়োজন একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন। স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন এবং নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতে যেসব পদক্ষেপ অতীব জরুরী তাহলো রাষ্ট্রপতি তিনজন বিচারপতি সমন্বয়ে সার্চ কমিটি গঠন করবেন।
যেহেতু সরকার প্রধান একটি রাজনৈতিক দল থেকে আসেন তাই নির্বাচন কমিশন সচিব পদে সরকার প্রধান পছন্দের ব্যক্তিকে নিয়োগ করেন এবং নির্বাচন কমিশন সচিবকে সরকার প্রধান তাঁর রাজনৈতিক দলের পক্ষে কাজ করলে পরবর্তীতে পুরস্কার স্বরূপ ভালো পদায়নের আশ্বাস দেন। ফলে নির্বাচন কমিশন সচিব প্রভাবিত হন।যেমন দ্বাদশ সংসদ ‘২৪ এর নির্বাচন কমিশন সচিব জাহাঙ্গীর আলমকে কালো নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য পুরস্কার হিসেবে তাকে স্বরাষ্ট্র সচিব করা হয়েছিল।তাই সম্পূর্ণ স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠনে সরকারের হস্তক্ষেপ মুক্ত রাখার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন সচিব নির্বাচন কমিশন বিভাগ হতে পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগ হবেন তা কোন যোগ্য ব্যক্তিকে কমিশন নিয়োগ দেবেন। স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন এবং সরকারের হস্তক্ষেপ মুক্ত রাখার লক্ষ্যে কোনভাবেই সরকারের নির্বাহী বিভাগ থেকে নির্বাচন কমিশন সচিব দেওয়া যাবে না।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষনার সাথে সাথে দেশের প্রশাসনের সকল কর্মকর্তাগণ যেমন নির্বাচন কমিশনের অধিনভুক্ত হবেন তেমনিএকমাত্র জেলা প্রশাসক ব্যতিত বাকী সকল কর্মকর্তাগণ জেলা নিবাচন কর্মকর্তার অধিনভুক্ত এবং উপজেলার ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ব্যতীত উপজেলার সকল কর্মকর্তাগণ উপজেলা অফিসারের অধীনস্থ হবেন। নির্বাচনের জন্য যেহেতু নিজস্ব শাখা বা সংস্থা রয়েছে এবং নির্বাহী বিভাগের তথা সরকারের চাপ মুক্ত রাখার জন্য জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জেলা রিটানিং অফিসার এবং উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সহকারি রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন । জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নির্বাচন থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত থাকবেন।নির্বাচনের স্বার্থে জেলা নির্বাচন অফিসার জেলার অধিনভুক্ত যে কোন উপজেলার যেকোনো কর্মকর্তাকে বদলি করতে পারবেন।নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবেন এমন কোন কর্মকর্তা তিন বছর কোন উপজেলায় কর্মরত থাকলে তাকে অবশ্যই অন্য কোন উপজেলায় বদলি করবেন।তবে পারিবারিক বিশেষ কারণে প্রয়োজন সাপেক্ষে জেলা প্রশাসক চাইলে পরবর্তীতে তাকে ঐ উপজেলার পুনঃ বদলি করতে পারবেন।রিটার্নিং এবং সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নির্বাচনের বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম দুর্নীতি অপরাধ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে জেলা ও উপজেলা নির্বাচন অফিসারকে ম্যাজেস্ট্রি ক্ষমতা দিতে হবে এবং নির্বাচন দায়িত্বে অবহেলা বা অনিয়মের কারণে প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং যে কোন সরকারী কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে যে কোন শাস্তি প্রদানের ক্ষেত্রে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ক্ষমতা প্রাপ্ত হবেন। নির্বাচনে অংশ গ্রহণকারী কোন ভুক্তভোগী প্রার্থী জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার বিচারে সন্তুষ্ট না হলে আদালতের সরণাপন্ন হতে পারবেন।
অতীতের নির্বাচনগুলোতে দায়িত্ব অবহেলা বা অনিয়মের ক্ষেত্রে কর্মকর্তা কর্মচারীদের শাস্তি না হওয়ায় তারা নির্বাচনে যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন না এবং প্রভাবশালী প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করেছেন।তাই নির্বাচনগুলোতে দায়িত্ব অবহেলা বা অনিয়মের ক্ষেত্রে কর্মকর্তা কর্মচারীদের শাস্তির বিধানের নীতিমালা তৈরী করতে হবে।
প্রধান সমন্বয়কারী রাষ্ট্র সংস্কার ফোরাম